ইসলামের দৃষ্টিতে রোগীর সেবা

৩ সপ্তাহ আগে
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানুষের প্রতিটি স্তরের জন্য নীতি ও আদর্শ নির্ধারিত হয়েছে। মানবসেবার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হলো রোগীর সেবা করা। কুরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব এতটাই উচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে যে, রোগী দেখতে যাওয়া ও সেবা করা শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং তা ঈমানের দাবি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।

রোগী ও মানবসেবা

 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ   তোমরা সৎকাজ ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য করো।(সুরা মায়েদাহ:২) রোগীর সেবা নিঃসন্দেহে একটি বড় সৎকাজ। এটি দয়া, সহমর্মিতা ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীক। আল্লাহ বারবার দুর্বলদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ তোমরা সদ্ব্যবহার করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সদ্ব্যবহারকারীদের ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা: ১৯৫)

 


রোগী দেখার গুরুত্ব ও সাওয়াব

রোগী দেখা ঈমানের একটি অংশ। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

مَنْ عَادَ مَرِيضًا أَوْ زَارَ أَخًا لَهُ فِي اللَّهِ، نَادَاهُ مُنَادٍ: أَنْ طِبْتَ، وَطَابَ مَمْشَاكَ، وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلًا যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেয় কিংবা কোনো ভাইকে সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ফেরেশতা ডেকে বলেন,তুমি পবিত্র, তোমার চলার পথ পবিত্র এবং তুমি জান্নাতে একটি ঘর লাভ করবে। (সহিহ মুসলিম:২৫৬৭)

 

আল্লাহ রোগীর মাঝে আছেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদিসে কিয়ামতের দিনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন,

 

يَا ابْنَ آدَمَ، مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي েহে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনাকে কিভাবে দেখতে যেতাম, আপনি তো রব্বুল আলামিন?

 

আল্লাহ বলবেন, أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلَانًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ، أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِندَهُ؟ তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, অথচ তুমি তাকে দেখতে যাওনি? তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তবে আমার উপস্থিতি সেখানে পেতে! (সহিহ মুসলিম:২৫৬৯)

 

রোগীর পাশে থাকা জান্নাতের পথ

 

যে ব্যক্তি রোগী দেখতে যায়, সে যেন জান্নাতের ফল সংগ্রহ করে আসল। (সুনানুত তিরমিজি:২০০৮)
 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগী দেখতে গেলে বলতেন,

 

لَا بَأْسَ، طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ কোনো সমস্যা নেই, ইনশাআল্লাহ এটি গুনাহ মাফের মাধ্যম হবে। (সহিহ বুখারি:৫৬৬২) এছাড়াও তিনি এই দুআও পড়তেন, أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، أَنْ يَشْفِيَكَ (সাতবার)  আমি মহান আল্লাহর কাছে, যিনি মহান আরশের রব, তোমার শিফা কামনা করি। 
(সুনানু আবি দাউদ: ৩১০৬)

 

ইসলামি দায়িত্ব ও করণীয়

 

রোগীর সেবায় আমাদের কিছু দায়িত্ব। ১.রোগীকে দেখা ও সাহচর্য দেওয়া ২.তার জন্য দুআ করা ৩.তার প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করা ৪.নাজুক মুহূর্তে পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়া ৫.সৎ উপদেশ ও আত্মিক সাহস দেওয়া ৬.তাঁর জন্য উত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা


অবহেলা করলে পরিণতি?

 

রোগীর প্রতি অবহেলা শুধু অমানবিক নয়; বরং তা ঈমান ও ইসলামি আদর্শের বিরোধী। যারা ধনী বা শক্তিশালী মানুষের সেবা করে, অথচ গরিব বা নিঃস্ব রোগীকে অবহেলা করে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিন কঠিন হিসাব অপেক্ষা করছে।


রোগীর সেবা ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু দয়া নয়, বরং ঈমানের নিদর্শন, জান্নাতের পথ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক সুযোগ। আজকের এই অস্পৃহ সমাজে মুসলিমদের উচিত,আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী বা অচেনা কোনো রোগীকেও শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও সেবার চেতনায় দেখা। তাহলেই সমাজে আবার ফিরে আসবে খাঁটি ইসলামি মানবতা ও দয়া।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন