কু-ধারণা হলো, অন্য কারও সম্পর্কে অকারণে খারাপ ধারণা পোষণ করা, যার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ নেই। অনেক সময় ঈর্ষা, অহংকার কিংবা শত্রুতার কারণে এ ধরনের কু-ধারণা গড়ে ওঠে। এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামে গুরুতর গোনাহর শামিল।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, হে মুমিনগণ! অধিকাংশ ধারণা থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা গোনাহ। (সুরা হুজরাত: ১২)। এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে অধিকাংশ ধারণা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ অধিকাংশ অনুমানই মিথ্যা ও পাপের উৎস। কোরআনের এই নির্দেশ মুসলমানদের অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও পরস্পরের ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার প্রতি আহ্বান।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কু-ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কেননা কু-ধারণা হলো সবচেয়ে মিথ্যা কথা। (বুখারি: ৫১৪৩, মুসলিম: ২৫৬৩)। তিনি আরও বলেন, তোমরা একে অপরের প্রতি কু-ধারণা পোষণ করো না, হিংসা করো না, পশ্চাতে দোষ চর্চা করো না। আল্লাহর বান্দারা ভাই ভাই হয়ে যাও। (মুসলিম: ২৫৬৩)। এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, কু-ধারণা শুধু ব্যক্তিগত পাপ নয়, বরং এটি সামাজিকভাবে ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক একটি আচরণ।
আরও পড়ুন:বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আহমাদুল্লাহ ও আজহারীর শোক প্রকাশ
কু-ধারণা পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে। এটি স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এমনকি সমাজের ভিতরেও ফাটল ধরায়। একজন ব্যক্তি যখন অন্যের সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে, তখন বিশ্বাসের জায়গায় স্থান করে নেয় অবিশ্বাস ও অশান্তি। এর ফলে মানসিক অস্থিরতা, গীবত, অপবাদ ও বিভেদের জন্ম হয়। আরও ভয়াবহ বিষয় হলো—অন্যের অন্তরের খবর না জেনে তাকে বিচার করা আল্লাহর অধিকার হরণ করার মতো মারাত্মক গোনাহ।
একজন মুসলমানের উচিত, সবসময় অন্যের প্রতি সদয় ও ইতিবাচক মনোভাব রাখা। অন্যের সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক কথা শুনলে যাচাই না করে বিশ্বাস না করা। নিজের ভুলের দিকটি আগে ভাবা, মানুষের আচরণ সম্পর্কে সুদৃঢ় ধারণার পরিবর্তে সহনশীল ও খোলামেলা মনোভাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখা এবং নিয়মিতভাবে এই
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ سُوءِ الظَّنِّ بِالنَّاسِ হে আল্লাহ! মানুষের সম্পর্কে কু-ধারণা থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
ইসলাম এমন এক জীবনব্যবস্থা যেখানে অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্যের প্রতি কু-ধারণা পোষণ করা আত্মিক রোগ এবং সামাজিক অনাস্থার উৎস। কোরআন ও হাদিস আমাদের শেখায়, কু-ধারণা থেকে দূরে থাকা শুধু ইবাদতের অংশ নয়, বরং এটি একটি উত্তম চরিত্রের প্রকাশ। তাই একজন মুমিনের উচিত, সবসময় নিজের অন্তরকে শুদ্ধ রাখা, অপরের ব্যাপারে ভালো ধারণা পোষণ করা এবং একটি সুন্দর ও বিশ্বস্ত সমাজ গঠনে সচেষ্ট থাকা।