ইসলামী পন্থায় টাকা জমানোর উপায়

১ সপ্তাহে আগে
সম্পদ জমানো ইসলামে নিষেধ নয়। বরং ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ আদায়ের জন্য সম্পদ থাকা শর্ত। মানুষ যা কিছুর মালিক তা মহান আল্লাহরই দান। ইসলামে সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণতা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি প্রাচুর্যের সময় অপচয় অপব্যয় করে সম্পদ খরচ করাও নিষিদ্ধ। অর্থ সঞ্চয়ের বিষয়েও ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা অপচয় ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বলেন, 

 

তোমরা আহার ও পান করো, আর অপচয় করো না, তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। (সুরা আরাফ ৩২)

 

আবার অর্থসঞ্চয় করতে গিয়ে কৃপনতাকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন, 

 

যে অর্থ সঞ্চয় করে ও তা বারবার গুণে দেখে। (সুরা হুমাযাহ ২)

 

হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ছিলেন একজন ধনী সাহাবি। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবির মধ্যে অন্যতম। সামান্য পুঁজিতে সেরা ব্যবসায়ীতে পরিণত হন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)।

 

তাঁর বন্ধু সাআদ (রা.) নিজ সম্পদের অর্ধেক এবং দুই স্ত্রীর একজনকে তালাক দিয়ে তাঁকে দিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। আবদুর রহমান তাতে সম্মত হলেন না; বরং বন্ধুকে মোবারকবাদ জানিয়ে ব্যবসার পথ বেছে নিলেন এবং ক্ষুদ্র পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। কিছু অর্থ জমা হওয়ার পর বিয়ে করলেন। মহর দিলেন খেজুরের আঁটি সম-ওজন স্বর্ণ। রাসুল (স.)-এর নির্দেশে কিছুদিন পর অলিমা করলেন।

 

তাঁর ব্যবসা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হলো। মক্কার উমাইয়া ইবনে খালফের সঙ্গে একটি ব্যবসায়িক চুক্তিও সম্পাদন করেন। সামান্য ঘি ও পনির কেনাবেচার মাধ্যমে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। কালক্রমে তিনি তৎকালীন মুসলিম উম্মাহর একজন সেরা ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হন। (আত তাবকাতুল কুবরা; ৩/৯৩; আল-ইসাবাহ: ৪/২৯১)

 

ইসলামের পথে অকাতরে দান করতেন তিনি। একদা তিনি রাসুল (স.)-এর  জীবদ্দশায় নিজের সমুদয় সম্পদের অর্ধেক সদকা করেন। এরপর ৪০ হাজার দিনার সদকা করেন। এরপর ৫০০ ঘোড়া আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য প্রস্তুত করে দেন। এরপর ৫০০ উট। এসব তাঁর ব্যবসায় অর্জিত সম্পদ। কথিত আছে, এক দিনেই তিনি ৩০টি দাস আজাদ করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি বদরি সাহাবিদের জন্য জনপ্রতি ৪০০ দিনারের অসিয়ত করে যান। তখন ১০০ বদরি সাহাবি জীবিত ছিলেন। সবাই ৪০০ দিনার করে লাভ করেছেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৭/১৬৩; আল-ইসাবাহ:৪/২৯১, ২৯৩)

 

আরও পড়ুন: যে ২ পাপের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ জাহান্নামে যাবে


একবার উসমান (রা.)-এর কাছে একখণ্ড জমি বিক্রি করেন। মূল্য বাবদ ৪০ হাজার দিনারের মালিক হন। সব দিনার তিনি  সাধারণ অভাবী লোক, বনু জুহরার গরিব-মিসকিন ও উম্মুল মুমিনিনদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। (আত তাবকাতুল কুবরা: ৩/৯৮)

 

একবার তাঁর বিশাল এক বাণিজ্য কাফেলা ৭০০ উট বোঝাই করা চানাবুট, আটা ও অন্যান্য মুদিসামগ্রী নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করে। বিশাল এই বাণিজ্য কাফেলা মদিনাজুড়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ খবর আয়েশা (রা.)-এর  কাছে পৌঁছার পর তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, আবদুর রহমান হামাগুড়ি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুর রহমান এ কথা শোনামাত্রই আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন, আমি আপনাকে সাক্ষ্য করে বলছি, আমার এ বিশাল বাণিজ্য কাফেলা ও সমস্ত পণ্য, এমনকি উট ও তার হাওদাসহ সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করে দিলাম। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৭/১৬৪)

 

ইমাম আবু হানিফা রহ.ও ধনী ছিলেন। ইরাক, সিরিয়া ও হেজাজ জুড়ে বিস্তৃত এলাকায় রেশমি কাপড়ের বিশাল ব্যবসা ছিল তার। তাই তো তিনি রাষ্ট্রীয় হাদিয়া-তোহফার পরোয়া না করে নিজ উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ, জ্ঞানের সেবা ও গরিব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতেন। সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর সওয়াবের কাজগুলো করা যাবে।

 

ইসলাম মানুষের এই প্রয়োজন ও আত্মমর্যাদাকে উপেক্ষা করেনি। হাদিসের ভাষ্য দেখুন, সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের সময় সেই অসুখে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে এলেন, যে অসুখে আমি মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়াই। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার যন্ত্রণার অবস্থা আপনি দেখেছেন। আর আমি একজন সম্পদশালী মানুষ। আমার একমাত্র মেয়ে ছাড়া কোনো ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করে দেব? রাসুল (সা.) বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে কি অর্ধেক সম্পদ দান করে দেব? বললেন, না। এক-তৃতীয়াংশ (দান করে দাও); আর এক-তৃতীয়াংশ অনেক। আর তুমি তোমার ওয়ারিশদের অসহায় এবং মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা চেয়ে বেড়াচ্ছে— এ অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া ভালো। (মুসলিম, হাদিস : ১৬২৮; বুখারি, হাদিস : ১২৯৫)

 

আরও পড়ুন: নবীজির আকিকা যেভাবে আদায় করা হয়


হাদিসটিকে আমরা এ বিষয়ে মূলনীতির মর্যাদা দিতে পারি। এ হাদিসের শিক্ষা হলো, সম্পদ সঞ্চয় করা অবৈধ নয়। সন্তানের জন্য সঞ্চয় করে রেখে যাওয়াকে ইসলামও উৎসাহিত করেছে। উদারপ্রাণে সবকিছু বিলিয়ে দেওয়া, যাতে পরক্ষণেই অন্যের কাছে হাত পাততে হয়— তা কাম্য নয়।

 

রাসুল (সা.)-ও সম্পদ সঞ্চয় করেছেন বলে আমরা দেখতে পাই। উমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বনু নজিরের খেজুর গাছ বিক্রি করে দিতেন, আর পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য রেখে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৭)

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন