ইসরাইলি বাহিনীকে নিজ চোখে ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাতে দেখেছি: সাবেক মার্কিন সেনা

১ দিন আগে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলি বাহিনী ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই হত্যাযজ্ঞ নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন বলে জানিয়েছেন সদ্য অবসর নেয়া এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা।

অ্যান্থনি আগুইলার নামে ওই সেনা কর্মকর্তা মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের একজন সদস্য ছিলেন। গাজায় মার্কিন ও ইসরাইল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে কাজ করতেন তিনি।

 

এই কর্মকর্তা সম্প্রতি পদত্যাগ করেন এবং কেন পদত্যাগ করেছিলেন তা বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছেন তিনি। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে। সাক্ষাৎকারে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ইসরাইলি বাহিনীকে (ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে জড়ো হওয়া) ফিলিস্তিনিদের ভিড়ের উপর গুলি চালাতে দেখেছি।’

 

তিনি আরও জানান যে, তিনি তার পুরো কর্মজীবনে কখনও ‘একটি বেসামরিক জনগোষ্ঠী, নিরস্ত্র, ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এত বর্বরতা এবং নির্বিচার ও অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ’ দেখেননি। আগুইলার বলেন, ‘আমি আমার নিজের চোখে যুদ্ধাপরাধ প্রত্যক্ষ করেনি।’

 

আরও পড়ুন: গোয়েন্দাদের জন্য ইসলাম ও আরবি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করছে ইসরাইল

 

একই ধরনের ভাষ্য উঠে এসেছে আরেক সাবেক মার্কিন সেনার মুখে। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) হয়ে কাজ করা সাবেক ওই মার্কিন সেনা ইসরাইলি টেলিভিশন চ্যানেল ১২-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির কার্যক্রমকে ‘মেরামতের অযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে এটি ‘বন্ধ হওয়া প্রয়োজন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

 

গত মে মাসে জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থার পরিবর্তে জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু এই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র কার্যত মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। গত দুই মাসে সংস্থাটির চারটি বিতরণ কেন্দ্রে এক হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে।

 

জাতিসংঘ এরই মধ্যে সতর্ক করে জানিয়েছে যে, গাজার লাখ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জিএইচএফের মাধ্যমে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা না পাওয়ারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

 

আরব নিউজের এক প্রতিবেদন মতে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক মার্কিন সেনা চ্যানেল ১২-কে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় জানান, নিরাপত্তাকর্মীরা কিভাবে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র থেকে মানুষ সরাতে তাদের দিকে গুলি ছুড়ছে তা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘তাদের শরীরের উপরের দিকে গুলি করা হচ্ছিল, পায়ের দিকে গুলি করা হচ্ছিল, যাতে তারা সেখান থেকে সরে যায়।’

 

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে দুই শতাধিক এমপির চিঠি

 

আরেকটি ঘটনায় তিনি একজন ঠিকাদারকে এক ব্যক্তির মুখে পেপার স্প্রের পুরো কৌটা খালি করতে দেখেন। এই ঘটনার একটা ভিডিও ফুটেজও ছড়িয়ে পড়েছিল। একে ওই মার্কিন সেনা ‘প্রাণঘাতী’ বলে উল্লেখ করেছেন।

 

এই সেনা আরও জানান, ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত এক নারীর দিকে আরেক ঠিকাদার একটি স্টান গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেনেডটি তার গায়ে লাগতেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল সে মারা গেছে।’

 

এর আগে জিএইচএফের দুজন ঠিকাদার মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেয়া সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেন যে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে নিয়মিতই স্টান গ্রেনেড ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করা হয়।

 

ঠিকাদারদের সরবরাহ করা ভিডিও চিত্রেও ত্রাণকেন্দ্রে গুলি ও স্টান গ্রেনেড ছোড়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। তারা জানান, অনেক ঠিকাদার সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব পালন করলেও তাদের অধিকাংশেরই যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই।

 

পঁচিশ বছর মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করা সাবেক এই সেনা সদস্য আরও বলেন, ‘জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো এমন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে গাজাবাসীর পক্ষে পৌঁছানো বেশ কঠিন। তাদের অধিকাংশেরই পায়ে জুতা নেই, পানি নেই এবং তাদের যুদ্ধাঞ্চল পেরিয়ে এই কেন্দ্রগুলোতে আসতে হয়।’

 

আরও পড়ুন: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা / কয়েকদিন ধরে না খেয়ে আছে গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ

 

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে স্কাই নিউজকে দেয়া এক বিবৃতিতে জিএইচএফ বলেছে, ‘এটি একজন অসন্তুষ্ট সাবেক ঠিকাদারের মন্তব্য, যাকে এক মাস আগে অসদাচরণের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল।’  

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ অভিযোগ আমাদের নজরে আসার পর আমরা তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করি। ভিডিওচিত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে কখনোই বেসামরিক নাগরিকদের দিকে গুলি চালানো হয়নি।’

 

‘ভিডিওতে শোনা গুলির শব্দ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে এসেছে, যা জিএইচএফ কেন্দ্রের বাইরে থেকে করা হয়েছে। এই গুলি কোনো ব্যক্তিকে নিশানা করে করা হয়নি এবং এতে কেউ হতাহতও হননি।’

 

জাতিসংঘের গাজা বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জিএইচএফের এমন সহিংস ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করে আসছে। সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘জিএইচএফের তথাকথিত এই বিতরণ পদ্ধতি আসলে একটি নৃশংস মৃত্যুফাঁদ। এখানে স্নাইপাররা যেন হত্যার অনুমতিপত্র পেয়েছে এমনভাবে জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।’

 

আরও পড়ুন: গাজায় অনাহারে মৃত বেড়ে ১২২

 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত জিএইচএফ জাতিসংঘের কর্মীদের পরিবর্তে বেসরকারি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করায়। জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রগুলো মূলত ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় অবস্থিত, যেখানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশাধিকার সীমিত।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন