ইরানের হাইপারসনিক মিসাইল কেন ঠেকাতে পারছে না ইসরাইল?

২ সপ্তাহ আগে
ইরানের দাবি ইসরাইলের গর্বের প্রতীক আয়রন ডোমকে নাকানিচুবানি খাইয়ে সফলভাবে দেশটিতে আঘাত হানছে একের পর এক ইরানি মিসাইল। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দাবি করা আইরন ডোমকে ফাঁকি দিয়েই তাণ্ডব চালানোর দাবি তেহরানের।

ইরান জানায়, তারা ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং মোসাদের পরিকল্পনা কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। আর সেখানেই ইসরাইলের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো কাজেই আসেনি।


এর আগে ইসরাইলে এ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে আয়রন ডোম বেশিরভাগ হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে: তাহলে ইরানের হামলা মোকাবিলা করতে পারছে না কেন ইসরাইল? আর কীভাবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রতিরক্ষা ভেদ করল?
 

ইসরাইলের দাবি তাদের আয়রন ডোম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সফলতা অর্জন করেছে। ২০১১ সাল থেকে এটি প্রতিটি সংঘাতে রকেট প্রতিহত করেছে চমৎকারভাবে। কিন্তু এবার ইরান ছুড়েছে চার শতাধিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল। সঙ্গে শত শত ড্রোন। আর যে কারণে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেন ক্লান্ত। সর্বোচ্চ ৮০-৮৫ শতাংশ সফলতা পেলেও অনেক মিসাইল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
 

ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরাইলের তেল আবিবের মিলিটারি হেডকোয়ার্টার আর একটি মোসাদ অপারেশন প্ল্যানিং সেন্টার সরাসরি আঘাত করেছে। কিছু মিসাইল পড়েছে আবাসিক এলাকায়।
 

আরও পড়ুন: সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা শুরু!


আয়রন ডোম কী?


আয়রন ডোম ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূলভিত্তি হলেও এটি পুরো ব্যবস্থার সবচেয়ে নিচের স্তরের একটি অংশ। এটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ। আয়রন ডোম আকাশ থেকে আগত কোনো রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে, তার গতিপথ নির্ধারণ করে এবং সেটিকে মাঝপথেই ধ্বংস করে দেয়।
 


আয়রন ডোম কীভাবে কাজ করে?


ইসরাইলের দাবি আয়রন ডোমের সফলতা প্রায় ৯০ শতাংশ। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের সময় রকেট হামলার মোকাবিলা করতে এটি তৈরি করা হয় এবং ২০১১ সালে এটি কার্যকর হয়। এই ব্যবস্থা মূলত নিচু পাল্লার রকেট থামাতে ব্যবহৃত হয়, যা বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শনাক্ত করতে সক্ষম নয়।


ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে আর কী কী ব্যবস্থা রয়েছে?


আয়রন ডোম ছাড়াও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় অ্যারো-টু এবং অ্যারো-থ্রি ইন্টারসেপ্টর। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আকাশেই ধ্বংস করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। অনেক সময় এটি মহাকাশের সীমানার মধ্যেও কাজ করে বলে দাবি ইসরাইলের।


এ ছাড়াও আছে ডেভিড স্লিং, যেগুলো মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে টার্মিনাল হাই অ্যালটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স ব্যবস্থা।


কীভাবে ড্রোন প্রতিহত করে ইসরাইল?


ড্রোন প্রতিরোধে এয়ার টু এয়ার মিসাইল ব্যবহার করে ইসরাইল। যেখানে যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টার ড্রোন ধ্বংস করা হয়।


আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?
 

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তিনটি প্রধান উপাদান: রাডার সিস্টেম, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ও ইন্টারসেপ্টর। যেটির সঙ্গে মিসাইলসহ লঞ্চার রয়েছে।


কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষক মারিনা মিরন বলেন, রাডার শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে কন্ট্রোল সেন্টারে তথ্য পাঠায়। প্রয়োজন হলে দুটি ইন্টারসেপ্টর পাঠানো হয়। একটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে। তবে এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইন্টারসেপ্টরের সংখ্যা সীমিত। ঠিক কতটি ইন্টারসেপ্টর রয়েছে তা গোপন রাখা হয়।
 

আরও পড়ুন: ‘শেষ পর্যন্ত’ লড়াইয়ের ঘোষণা ইরানের


ইরান কীভাবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিলো?


ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সফল। অর্থাৎ কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ঠিকই লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছেছে।


ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করার সম্ভাব্য কারণগুলো হলো ইন্টারসেপ্টর ফুরিয়ে যাওয়া– এক যুগে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইরান ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিটি টার্গেট ধ্বংসে সাধারণত দুটি ইন্টারসেপ্টর ব্যবহৃত হয়। ফলে মজুত দ্রুত শেষ হতে পারে।


দ্বিতীয়ত, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের কাছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় দেয়ার আগেই লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছে যায়। যেমন: ফাতাহ-টু ক্ষেপণাস্ত্রটি হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল ব্যবহার করে। এটি প্রচণ্ড গতিতে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায় এবং গতিপথ পরিবর্তন করে রাডারকে বিভ্রান্ত করে।


তৃতীয়ত, ক্রুজ মিসাইল– ইরানের হভিজে নামক ক্রুজ মিসাইল কম গতির হলেও এটি বিমানের মতো নিচু দিয়ে উড়ে গিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে।


চতুর্থত, ডেকয় বা প্রতারণামূলক টার্গেট– ইরান একাধিক ভুয়া লক্ষ্যবস্তু পাঠিয়ে ইসরাইলি রাডারকে বিভ্রান্ত করে এবং আসল মিসাইলের জন্য পথ খুলে দেয়। এই কৌশলে ইন্টারসেপ্টরের অপচয় হয়।


রাডার জ্যামিং প্রযুক্তি– কিছু মিসাইলে এমন প্রযুক্তি থাকে যা রাডারকে বিভ্রান্ত করে বা অদৃশ্য হয়ে যায়। ফলে ইন্টারসেপ্টর লক্ষ্যবস্তু খুঁজেই পায় না।


বিশ্লেষক গ্যাটোপোলাস বলছেন, এই যুদ্ধ এখন মূলত অবসন্নতার লড়াই। ইসরাইলি বিমান ইরানের লঞ্চার ধ্বংস করতে তৎপর। কিন্তু ইরান-ইসরাইল দূরত্ব ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটারের বেশি হওয়ায় সেখানে টিকে থাকা কঠিন। এখন প্রশ্ন হলো: ইরানের কাছে কত ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা দিয়ে এই অবসন্ন লড়াই চালিয়ে যেতে পারে? আর ইসরাইলের হাতে কত এরো-টু ও থ্রি আছে, যেগুলো দিয়ে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে পারবে তারা?

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন