ইটভাটা বন্ধ হলে বেকার হবে লক্ষাধিক শ্রমিক; অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

২ সপ্তাহ আগে
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত রামগতি উপজেলা। মেঘনা নদী বেষ্টিত এ উপজেলায় সাড়ে ৭ লাখ জনগোষ্ঠীর বাস। এসব মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ, নদীতে মাছ শিকার কিংবা ইটভাটায় শ্রম দেয়া। এই তিনটি পেশার ওপর নির্ভর করেই জীবন ধারণ করছে চরাঞ্চলের এসব মানুষ।

জানা যায়, রামগতিতে ৫১টি ইটভাটা থাকলেও এরইমধ্যে বিভিন্ন কারণে ৭ টি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ শিল্পে জড়িত রয়েছে আরও ৫০ হাজার লোক। সব মিলিয়ে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষের আয় রোজগারের একমাত্র মাধ্যম ইটভাটাগুলো। তবে ইটভাটার ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় করে এ শিল্পকে সরকারের নীতিমালার আওতায় এনে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার দাবি জানান স্থানীয়রা।
 

স্থানীয়রা বলছেন, ফসলি জমিরে আশপাশে ইটভাটা স্থাপন একদিকে যেমন ক্ষতি রয়েছে, অন্যদিকে ইটভাটায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উপকরাও রয়েছে। দুই দিক বিবেচনা করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।


এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রামগতি উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর যৌথভাবে সপ্তাহব্যাপী অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে উপজেলার চর আফজাল এলাকায় তিনটি অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়।এই অভিযানে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন র‌্যাব-১১ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।


অভিযান চলাকালে আমানত ইটভাটা ও জেসমিন সারোয়ারসহ তিনটি অবৈধ ইটভাটার চুল্লি, চিমনি ও কাঁচা ইট ৫টি ভ্যাকু মেশিনের সাহায্যে বিনষ্ট করা হয়।


আরও পড়ুন: ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা, একজনের কারাদণ্ড
 

এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চলাকালে ইটভাটার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। এতে প্রায় দু'ঘণ্টা ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।
 

এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলছেন, এ অঞ্চলে বর্তমানে কোনো কাজকর্ম নেই। ভাটাগুলো বন্ধ হলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসনের মানবিক দৃষ্টি কামনা করছেন তারা। অন্যথায় তাদের জীবিকা নির্বাহের এই মাধ্যমটি কোনোভাবেই বন্ধ করতে দিবে না শ্রমিকরা।
 

সচেতন মহল বলছেন, হঠাৎ করে দেশীয় ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্তে চরম বেকারত্বের ঝুঁকিতে পড়বে ইটভাটার সঙ্গে জড়িত এ অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। ভাটাগুলো বন্ধ হলে এসব শ্রমিক বেকার হয়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। লাখো শ্রমিকের বেকারত্বের দিক বিবেচনা করে ইটকে শিল্প হিসেবে নিয়ে নীতিমালার আওতায় আনা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন বিষ্টিজনরা।
 

চররমিজ ইউনিয়নের আমানত ব্রিকফিল্ডের শ্রমিক আবদুল গনি বলেন, ‘আমরা বছরের প্রায় ৬ মাস এসব ফিল্ডে কাজ করি। মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা রক্ষাসহ অভয়াশ্রমের কারণে বছরের প্রায় ৫ মাস বেকার থাকতে হয়। ওই সময়ে আমরা ইটভাটায় কাজ করি। ভাটা বন্ধ হলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে? বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা খাব কি?’
 

চরআফজল গ্রামের ওহাব ব্রিকসের শ্রমিক আব্দুজ জাহের বলেন, ‘আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তার পর ইটভাটা বন্ধ করেন। ইটভাটা বন্ধ করলে আমরা খাবো কি? ছেলে-মেয়ে ও মা-বাবা নিয়ে কই যাবো? অভাবের তাড়নায় আমরা যদি কোনো অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ি, তখন এই দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে, এমন প্রশ্নও করেন তিনি।’
 


সমাজকর্মী মো. রায়হান বলেন, ‘ইটভাটার পজিটিভ ও নেগেটিভ দুই সাইট রয়েছে। হঠাৎ করে এসব ভাটা বন্ধ করলে হাজার হাজার শ্রমিক চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বেকারত্বের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে চুরি ডাকাতি ও মাদকসহ সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। বাড়বে অপরাধ প্রবণতা। এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে সরকার ও প্রশাসনকে ‘


এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. খলিল ও সাধারণ সম্পাদক সানাউল্যাহ বলেন, ‘আমাদের দুজনের মালিকীয় ব্রিকফিল্ডগুলো পরিবেশ বান্ধব ঝিগঝাগ। তবে এ উপজেলায় আরও ৪৪টি ইটভাট রয়েছে। হঠাৎ করে ইটভাটা বন্ধ করে দিলে এ শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বেকার হয়ে পড়বে অর্ধলাখ শ্রমিক। এসব বেকার শ্রমিকরা জড়িয়ে পড়বে নানান অপরাধে। তাই আমরা দাবি করছি, ইটভাটাগুলো ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হোক। এবং সরকারের নীতিমালার মধ্যে এনে পরিচালনা করা হোক। এতে মালিক-শ্রমিক উভয়েই পর্যায়ক্রমে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিতে পারবে।’


আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে অবৈধ ৩ ইটের ভাটা গুড়িয়ে দিলো প্রশাসন
 


লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, ‘মূলত গড়ে উঠা এসব ইটভাটায় হাজার হাজার শ্রমিক রয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সরকারের নির্দেশনাও পালন করতে হয়। সব দিক মাথায় রেখেই আমরা কাজ করছি।’


রামগতির ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এ অঞ্চলের ইটভাটায় প্রচুর পরিমাণ শ্রমিক রয়েছে। বেকারত্ব ও মানবিক বিষয়টিও মাথায় রয়েছে। আবার সরকারের নির্দেশনাও মানতে হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন