ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও মাটির টানে চাষাবাদে আব্দুল্লাহ

৩ দিন আগে
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার যান্ত্রিকতার জীবন বেছে না নিয়ে তিনি মাটির সঙ্গে গড়লেন গভীর এক মিতালি। ধুলো মাখা গায়ে কৃষকের বেশে দাঁপিয়ে বেড়ান মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। আধুনিক কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে ফল আর সবজি চাষে পেয়ে চলছেন সাফল্য। কুঁড়িয়েছেন খ্যাতিও।

আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন ২০১২ সালে। পরে রাজধানীতে একটি আইটি ফার্ম খুললেও সেখানে মন বসেনি। যান্ত্রিকতার জীবন তাকে ধরে রাখতে পারেনি। মাটির গন্ধ তাকে টানতো। এক পর্যায়ে সব ছেড়ে মাটিকেই আপন করে নিলেন। গ্রামে ফিরে শুরু করেন চাষাবাদ। ২০২০ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও যোগ দেন। সেই থেকে শিক্ষকতার পাশাপাশি পুরোদস্তর কৃষক হয়ে ওঠেন।


গ্রামের মানুষ যখন সনাতনী পদ্ধতিতে ধান-পাট চাষে ব্যস্ত মামুন তখন দেখালেন ভিন্ন কিছু। আধুনিক কৃষির সঙ্গে পরিচয় করালেন সবাইকে। চাষাবাদের পদ্ধতি বদলে ফলন যে দ্বিগুণ হয় তার প্রমাণও রাখলেন। ধান ছাড়াও যে ভুট্টা, লেবু, মালটা, শশা, কমলা, কলা ফলানো সম্ভব এই উপজেলায় তা দেখিয়ে দিলেন। তবে লেবু চাষে পেয়েছেন বেশি সফলতা।


নিজের উৎপাদিত ফল আর সবজি নিজেই হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে করে আধুনিক কৃষক নামেরও তকমা পেয়েছেন। শিক্ষক কিংবা ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ের চাইতে কৃষক পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।

নিজের উৎপাদিত ফসল স্থানীয় হাটে নিজেই বিক্রি করে আব্দুল্লাহ। ছবি: সময় সংবাদ 

 

আরও পড়ুন: পায়রা বন্দরের অধিগ্রহণ করা জমি লিজ, চাষাবাদের সুযোগ চান কৃষকরা


সময় সংবাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘কৃষিতেই আমি নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাই। অন্য কিছু আমাকে টানে না। মাটির সঙ্গে খেলা করতেই আমার ভালো লাগে। আধুনিক জীবনের চাইতে গ্রামের সহজবোধের জীবনকেই আমি বেছে নিয়েছি। অন্য কোনো পরিচয় নয়, কেউ কৃষক হিসেবে ডাক দিলেই আমি সবচাইতে খুশি হই।’

নানান জাতের ফল আর সবজি চাষ করেন আব্দুল্লাহ। ছবি: সময় সংবাদ


চাষাবাদের শুরু কীভাবে আর এতে সংকটের জায়গাটা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, চাষাবাদের প্রথম দিকে অনেক হোঁচট খেয়েছি। কচু দিয়ে শুরু করেছিলাম। গ্রামের মানুষজন নানান কথা বলতো। তবে থেমে যাইনি, কারণ মাটি আমাকে টানতো। লাভ-ক্ষতির হিসাবের চাইতে মনে হতো আমি মাটি থেকেই কিছু বের করে আনবো। পরে আধুনিক অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করে মাল্টা, লেবু, ভুট্টা চাষে সফলতা এসেছে।


বর্তমানে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে চায়না-থ্রি চাষ করছেন তিনি। যার ফলন সারা বছরই পাওয়া যায়। শুধু লেবু থেকে মাসে আয় হয় লাখ টাকা।

 

পুরো উপজেলায় এখন আধুনিক কৃষক হিসেবে পরিচিত আব্দুল্লাহ আল মামুন। কৃষিতে এমন সাফল্য দেখে অনেক তরুণই এখন স্বপ্ন দেখছেন কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। প্রতিনিয়ত বাড়িতে করা বাগান আর মাঠের ফসল দেখতে আসেন স্থানীয়রা।


তোফাজ্জল হোসেন নামে এক তরুণ বলেন, মামুন ভাইয়ের চাষাবাদ অনন্য এক দৃষ্টান্ত। কৃষিপ্রধান দেশ হয়েও আমরা যে কৃষককে অবহেলা করি সেই প্রথা ভেঙে দিয়েছেন তিনি। কৃষিকে ধারণ করেও যে ক্যারিয়ার আর সফলতার সহজ জীবন ধারণ করা যায় তার এক উদাহরণ তিনি। এখন সময় এসেছে সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর।


স্থানীয় কৃষক কবির উদ্দিন বলেন, আব্দুল্লাহর কাছ থেকে নতুন কিছু শিখতে পারছি। আমাদের সবার সাথে মেশে। কোনো অহংকার নেই। আমরা নিজেদের একজনই মনে করি তাকে। নতুন ফসল চাষে লাভবান হওয়ার প্রক্রিয়াতে আব্দুল্লাহ অনেক এগিয়ে।

 

আরও পড়ুন: কৃষিতে টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি সংযোজনের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আ. আল মামুন বলেন, ‘এই উপজেলায় কৃষিতে সম্ভাবনার এক নাম আব্দুল্লাহ আল মামুন। আমাদের পক্ষ থেকে এই কৃষি উদ্যোক্তাকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। তরুণরা কৃষিতে আসলে বদলে যাবে বাংলার অর্থনীতি।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন