ওমানের মধ্যস্থতায় পরমাণু ইস্যুতে নতুন একটি চুক্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েছে। সবশেষ গত শুক্রবার (২৩ মে) ইতালির রাজধানী রোমে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই জানায়, আলোচনায় অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে।
যদিও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে মতানৈক্য রয়েই গেছে। এসব বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইরানিরা জানিয়েছেন, চুক্তি হোক বা না হোক, কোনো অবস্থাতেই পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) একাধিক ইরানি সূত্রের বরাতে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের উপর ‘সাময়িক বিরতি’ দিতে রাজি হতে পারে, যদি যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে জব্দ করা ইরানি তহবিলের কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড় করে এবং বেসামরিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থাৎ ৩.৬৭% অভ্যন্তরীণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়।
আরও পড়ুন: পরমাণু আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য ওমানকে প্রশংসা ইরানের
রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, পরমাণু আলোচক দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বুধবার জানিয়েছে, ওয়াশিংটন তেহরানের শর্ত মেনে নিলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শিগগিরই রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে’। তবে বিষয়টি ‘এখনও আলোচনা হয়নি’।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই চুক্তির অধীনে তেহরান এক বছরের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে, অত্যন্ত সমৃদ্ধ মজুদের কিছু অংশ বিদেশে পাঠাবে অথবা বেসামরিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে জ্বালানি প্লেটে রূপান্তর করবে।
তবে রয়টার্সের এই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও কাল্পনিক’ অভিহিত নাকচ করে দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলমান আলোচনার ফলে ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না। তেহরান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি একদম মিথ্যা ও কাল্পনিক।’
তিনি আরও বলেন,
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা এনপিটির অধীনে আমাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার থেকে উদ্ভূত এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ২২৩১-এও অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: চুক্তি করতে অস্থায়ীভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থগিত করবে না ইরান: মুখপাত্র
তেহরান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এপ্রিল থেকে পাঁচ দফা পরোক্ষ আলোচনা করেছে। আলোচনার লক্ষ্য হলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করা। কয়েক দশক ধরে ইরানিরা বলে আসছে যে, তারা কখনই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে এই নীতি মেনে চলতে হবে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন পরস্পরবিরোধী অবস্থান প্রকাশ করেছে। কেউ বলেছেন যে, তাদের একমাত্র ‘রেড লাইন’ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। আবার কেউ জোর দিয়ে বলছেন, সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের উপর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার চাপ শেষ পর্যন্ত আলোচনার পতন ঘটাতে পারে।