নিয়োগের বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় অবহিত করা হলেও অনুমোদন নেয়া হয়নি। এ ছাড়া অবহিতকরণের আগেই রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। আর এই পুরো প্রক্রিয়া যথাযথভাবে হয়নি এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা।
জানা যায়, বর্তমান রেজিস্ট্রার ড. হারুন-অর রশিদ সব শেষ ২০২১ সাল পর্যন্ত ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রায় ৩ বছর পর ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিষয়টি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে হয়নি। সিন্ডিকেট কর্তৃক যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই সার্চ কমিটি নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। ঢাকায় গোপনে কয়েকজনকে ডেকে ফরমালিটি মেইনটেইন করে রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য।
আরও পড়ুন: ইউজিসির কাছে ৬ দাবি সিটি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের
তবে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির নিয়োগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে সার্চ কমিটি নিয়োগ দিয়ে সিন্ডিকেট সভায় অবহিত করেছে, সিন্ডিকেটে পাশ করা হয়নি। যে কারণে এটি পুরোপুরি অবৈধ নিয়োগ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া রেজিস্ট্রারের পেছনে প্রতিমাসে এক লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে; যা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা অপচয় হচ্ছে।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, যে সব বিশ্ববিদ্যালয় ১০ বছর অতিক্রম করেছে ইউজিসির নিয়ম অনুসারে সে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরে থেকে রেজিস্ট্রার নিয়োগের নিয়ম নেই। যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার অভিজ্ঞতা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ছাড়াও সার্চ কমিটি নিয়োগ দিয়েছে, যেখানে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেই।
আরও পড়ুন: বেরোবিতে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগে কেন শর্ত শিথিল?
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। উপাচার্য যোগদানের পর সেই বছরের ১৪ অক্টোবর রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলামকে।
ড. তাজুল ইসলামের কাছে নিয়োগের বিষয়ে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউজিসির যে প্রসিডিউর সেই প্রসিডিউর অনুসরণ করে নিয়োগ দিতে গেলে সেটি ছিল সময় সাপেক্ষ। আমি সাময়িক দায়িত্বে ছিলাম। সে কারণে ইউজিসিকে অবহিত করে বর্তমান রেজিস্ট্রারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে; যা সিন্ডিকেটকে অবহিত করা হয়েছে এবং অনুমতি নেয়া হয়েছে। তবে বর্তমান রেজিস্ট্রারের চুক্তির সময় শেষ হলে হয়তো ইউজিসির বিধি মেনেই নিয়োগ দেয়া হবে।’
কেন তাড়াহুড়ো করে রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হলো? সেই প্রশ্নে ড. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালনে আগ্রহী ছিলেন না।’
আরও পড়ুন: কুয়েটে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, তদন্তে ইউজিসির কমিটি
২০২২ সালের ২০ মার্চ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরিত এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক ( অর্থ ও হিসাব), পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চলতি দায়িত্ব প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি/ সামরিক কর্মকর্তা এবং ক্ষেত্র বিশেষে কলেজের শিক্ষকগণকে চুক্তিভিত্তিক/ খণ্ডকালীন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে প্রশাসনিক কার্যাদি সুচারুরূপে সম্পাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন/ প্রবিধান অনুযায়ী উল্লিখিত পদ সমূহে পূর্ণকালীন নিয়োগ প্রদান প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠাকাল হতে ১০ বছর উত্তীর্ণ হয়েছে এমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে বর্ণিত পদ সমূহে অবিলম্বে বিধি মোতাবেক পূর্ণকালীন নিয়োগ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে অবহিত করার অনুরোধ করা হলো।
আরও পড়ুন: কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদ ধসের ঘটনায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি
তবে রেজিস্ট্রার নিয়োগের বিষয়ে বেরোবি উপাচার্য ড. শওকাত বলেন, ‘স্থায়ী রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য ইউজিসিতে চিঠি দেয়া হবে। ইউজিসি যেভাবেই নির্দেশনা দেবে সেভাবেই সার্কুলার ও নিয়োগ দেয়া হবে।’
তবে বর্তমান রেজিস্ট্রার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনেই রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়ম পরিপন্থী কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি, ভবিষ্যতেও দেয়া হবে না।’
উপাচার্য ড. শওকাত আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে একটি পক্ষ তা বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তারা কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল চায় না। তারাই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ করছে, যার কোনো ভিত্তি নেই।’

২ সপ্তাহ আগে
৩







Bengali (BD) ·
English (US) ·