আসাদের পতনে দেশে দেশে সিরীয়দের উল্লাস

৩ সপ্তাহ আগে
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা সিরীয় প্রবাসীরা আনন্দ প্রকাশ করতে রাস্তায় নেমেছেন। জার্মানি, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, তুরস্ক এবং লেবাননের শহরগুলোতে পতাকা ওড়ানো, স্লোগানের মাধ্যমে সিরীয়রা নতুন অধ্যায়ের উদযাপন করছেন।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন দেশে থাকা সিরীয়দের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বইতে থাকে। কেউ রাস্তায় মিছিল করেন। কেউ বিদ্রোহীদের পতাকা উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তাদের এই উদযাপন দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির বহিঃপ্রকাশ।

 

জার্মানির বার্লিনে সিরীয়রা পতাকা নিয়ে রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। যুদ্ধে দেশত্যাগ করা লাখ লাখ সিরীয় এখন জার্মানিতে বসবাস করছেন। তারা এই বিজয়ে নিজ দেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশা করছেন।

এসময় এক সিরিয়ান বলেন, ‘আজকের এই দিন আমাদের জন্য বার্লিন প্রাচীর পতনের সমতুল্য। এটি আমাদের জন্য মুক্তির দিন। আমরা সিরিয়ার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে সিরিয়ায় ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার আশা করছি।’

 

আরও পড়ুন: জর্ডান-লেবানন থেকে দেশে ফিরছেন সিরিয়ানরা

 

যুক্তরাজ্যের লন্ডন এবং ম্যানচেস্টারে সিরীয় প্রবাসীরা স্লোগান আর নিজের দেশের পতাকা হাতে নিয়ে উদযাপন করেছেন। দামেস্কে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করায় প্রবাসীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তাদের মতে, এই জয় দেশের পুনর্গঠনে একটি মাইলফলক হতে পারে।

 

ঢাকঢোল পিটিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসের রাস্তায় সমবেত হন শত শত সিরীয় নাগরিক। তাদের সবার হাতেও থাকে নিজ দেশের পতাকা। আসাদ সরকারের পতনের পর নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে চাইছেন অনেকেই। তাদের প্রত্যাশা নতুন সরকার আগের মতো নৃসংশতা চালাবে না।

 

গ্রিসের এথেন্সে সিরীয় দূতাবাসে বিদ্রোহীদের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এক ভিন্নধর্মী উদযাপন করা হয়। কয়েকজন বিদ্রোহী সমর্থক দূতাবাসের চত্বরে প্রবেশ করেন এবং সেখানে আসাদের প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলেন। এ ঘটনায় গ্রিসের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী হস্তক্ষেপ করলেও উদযাপন চলতেই থাকে।

 

এসময় এক সিরীয় শরণার্থী বলেন, ‘আমাদের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এত বছরের নির্মম স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে, যা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। যদিও শাসক পালিয়ে গেছে, সে জনগণকে অসহায় অবস্থায় রেখে গেছে। এমন এক শাসক, যিনি তার সহকর্মীদের প্রতিও কোনো দায়িত্বশীল আচরণ করেননি।’

 

আরও পড়ুন: সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন নিয়ে কী বললেন ট্রুডো?

 

তুরস্কর আঙ্কারায় সিরীয় প্রবাসীরা বিদ্রোহীদের বিজয়কে কেন্দ্র করে মিছিল বের করেন। তুরস্কে প্রায় ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থী বসবাস করেন, যারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে শুরু করেছেন। বিদ্রোহীদের এই বিজয়কে তারা নিজেদের প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন।

 

একই চিত্র দেখা গেছে লেবাননের বৈরুতেও। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেবানন সরকার সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করেছে। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

 

এর আগে রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক দখলে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর দেশ ছেড়ে পরিবারসহ রাশিয়ায় আশ্রয় নেন বাশার আল-আসাদ।

 

উল্লেখ্য, আসাদ তার বাবা হাফেজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে ক্ষমতায় বসেন। তার বাবাও ২৯ বছর ধরে সিরিয়া শাসন করেছেন। তিনিও অনেকটা তার ছেলে বাশার আল-আসাদের মতোই। দমনপীড়ন চালিয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন