মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইবে। সিরিয়ার এ অভ্যুত্থানে অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের জনগণ সরকারের দুর্নীতি, অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মাত্র ১২ দিনের মাথায় আসাদ পরিবারের পাঁচ দশক পুরনো মসনদ ভেঙে দিয়ে সিরিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম। তাদের এ জয়ে তৈরি গণঅভ্যুত্থানের জোয়ার পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, আসাদের পতনের পর এমন অনেক ব্যক্তি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন যাদের অনেক আগেই সরকারিভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। সিরীয়দের বাধভাঙা উল্লাসে অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এমন প্রতিবাদ হবে।
আরও পড়ুন: সংকটে বিপর্যস্ত সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের ‘গাড়িবিলাস’
চ্যাথাম হাউসের মিডল ইস্ট এন্ড নর্থ আফ্রিকা প্রোগ্রামের ড. হাইদের মতে,
আমার মনে হয়, আশপাশের (সিরিয়ার) দেশের জনগণ সিরিয়ার এ অভ্যুত্থানে অনুপ্রাণিত হয়ে বছরের পর বছর নিপীড়নের পর আবারও আশাবাদী হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলে নানা রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া মিত্ররা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন বলে মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশ্লেষকরা। মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুশ বিমান ও নৌ সামরিক ঘাঁটি রাখতে আসাদের সঙ্গে বোঝাপড়া ছিল ভ্লাদিমির পুতিনের। নতুন সরকারের আমলে আদৌ সেই ঘাঁটি টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে, কর্তৃত্ব হাতছাড়া না করতে গোলান ও তুরস্কের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে মস্কো।
গিগা ইন্সটিউট ফর মিডল ইস্ট স্টাডিজের বিশ্লেষক আন্দ্রে ব্যাংক বলেন,
মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রস্থলে একটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটি যেখানে মার্কিন সেনা আছে, যেখানে ইসরাইল কাছাকাছি রয়েছে, যেখানে তুরস্কও কাছাকাছি এবং এই দেশগুলো সে অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আমার মনে হয়, রাশিয়া এ ঘাঁটি টিকিয়ে রাখতে চাইবে।
এদিকে, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সিরিয়ার এমন রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ইরানকে অসুবিধায় ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টকে আশ্রয় কি পুতিনের গোপন বার্তা?
আন্দ্রে ব্যাংকের মতে,
ইরানের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ইরান সরকার তেহরান থেকে বাগদাদ, বাগদাদ থেকে দামেস্ক হয়ে বৈরুতে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সাহায্য পাঠায়। এখন দামেস্কে আসাদের হার ইরানের জন্য অনেক বড় এক ধাক্কা।
বিবিসির এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের এমন দুর্বল পরিস্থিতির ফায়দা নিতে পারে ইসরাইল। কারণ, ইসরাইল নিজের অস্তিত্বের জন্য ইরানকে হুমকি মনে করে। এদিকে, জোলানির বক্তব্য বিশ্লেষণ করে সিএনএন জানায়, ক্ষমতা নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক হবে এইচটিএস।
আরও পড়ুন: আসাদের পতন /গোলান মালভূমির সিরিয়া-নিয়ন্ত্রিত এলাকা ‘দখল’ করল ইসরাইল
এর আগে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে জোলানি জানান, তার দল অন্যান্য সব সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এইচটিএস যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের অবস্থানের জানান দিতেই মার্কিন গণমাধ্যমকে ইচ্ছাকৃতভাবে বেছে নিয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
]]>