ইসলামি শরিয়তের আলোকে আশুরার অনেক তাৎপর্য ও ফজিলত রয়েছে। এছাড়া আশুরায় বেশ কিছু বর্জনীয় কাজ আছে। চলুন জেনে নিই আশুরার বর্জনীয় কাজগুলো কী কী।
আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে প্রাচীন আরবদের মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হতো এই দিনটি। আশুরার দিন মক্কার মানুষ রোজা রাখতেন এবং কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করতেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদের রোজা রাখায় উৎসাহ দেন। এ ছাড়া রমজানের রোজার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।
কারবালার শহীদদের স্মরণে শোক প্রকাশ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতি হোসাইন (রা.) ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে স্বীয় পরিবার ও অনুসারীদের সঙ্গে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। ঘটনাক্রমে দিনটি ছিল ৬১ হিজরির ১০ মহররম বা আশুরার দিন। বিষয়টি মুসলিম উম্মাহর কাছে সহনীয় নয়।
আরও পড়ুন: কোরআনে বর্ণিত যে ১০ শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ অপছন্দ করেন
তবে একটা শ্রেণি রয়েছে, যারা ১০ মহররম কারবালার শহীদদের স্মরণে শোক প্রকাশ অনুষ্ঠান, মর্সিয়া গাওয়ার ব্যবস্থা এবং তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করেন। সেই সঙ্গে বিলাপ-মাতম করে ও বুক চাপড়ে শোক প্রকাশের রীতি পালন করেন। এগুলো কাম্য নয়। এ জাতীয় কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থিত নয় এবং আশুরার সঙ্গে এসবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। উপরন্তু এ ব্যাপারে ইসলামের কঠিন হুঁশিয়ারির বর্ণনা এসেছে।
ভিত্তিহীন ও দুর্বল হাদিস বর্ণনা
অনেকে মহররম ও আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত আলোচনা করতে গিয়ে অসখ্য কল্পকথা ও দুর্বল হাদিস বলেন। এমন একটি কথা হলো: ‘যে ব্যক্তি মহররমের প্রথম দশ দিন রোজা রাখে, সে দশ হাজার বছর যাবৎ দিনে রোজা ও রাতে ইবাদতের সাওয়াব পাবে।’ এটি একটি বানোয়াট বর্ণনা। নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে তা পাওয়া যায় না। (আল্-লাআলি, ইমাম সুয়ূতি: ২/১০৮-১০৯)
আশুরায় যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন
১. হজরত হুসাইন (রা.)-এর স্মরণে কাল্পনিক তাজিয়া বা নকল কবর বানানো থেকে বিরত থাকা।
২. তাজিয়া বানিয়ে তা কাঁধে বা যানবাহনে বহন করে মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করা থেকে বিরত থাকা।
৩. নকল এসব তাজিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা এবং তাজিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকে বিরত থাকা।
৪. নিজেদের দেহে আঘাত বা রক্তাক্ত করা থেকে বিরত থাকা।
৫. শোক বা মাতম করা থেকে বিরত থাকা।
৬. যুদ্ধসরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা থেকে বিরত থাকা।
৭. হায় হুসেন, হায় আলি ইত্যাদি বলে বিলাপ, মাতম কিংবা মর্সিয়া ও শোকগাথা প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বুকে-পেটে-পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকে বিরত থাকা।
আরও পড়ুন: আশুরার রোজায় এক বছরের গুনাহ মাফের সুযোগ
৮. ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাজিয়া বা কবরের বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকা।
৯. হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহ তা’য়ালা আনহুর নামে ছোট বাচ্চাদের ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ওই বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটা মহররম বিষয়ক একটি কু-প্রথা।
১০. আশুরায় শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা।
]]>