আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ঘন চিনির আমদানি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও

১ সপ্তাহে আগে
শিল্পের কাঁচামালের আড়ালে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ঘন চিনি হিসেবে পরিচিত সোডিয়াম সাইক্লোমেট আমদানি দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সাধারণ চিনির তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি হওয়ায় এটি চকলেট, আইসক্রিম, বেভারেজসহ শিশুখাদ্যেও মেশানো হচ্ছে। গত দুই মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ দুইটি চালানে ১০০ মেট্রিক টন ঘন চিনি জব্দ করেছে, পাশাপাশি সন্দেহভাজন আরও কয়েকটি চালান পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে।

স্বচ্ছ বড় দানার মতো দেখতে হওয়ায় খালি চোখে মনে হবে যেন চিনি; কিন্তু স্বাদে এই পদার্থ চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি। আসলে এটি মোটেও চিনি নয়; এমনকি চিনি তৈরির কোনো উপকরণও এতে নেই। চীনের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় তৈরি এ কৃত্রিম মিষ্টিকারক সোডিয়াম সাইক্লোমেট, যা ঘন চিনি নামেও পরিচিত, এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘এক সময় মানুষ এটিকে স্যাকারিন নামে চিনত। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ১৯৬৯ সালেই এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে ঘন চিনিকে রূপান্তর করে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’

 

সবশেষ গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের দুইটি কন্টেইনারে অভিযান চালিয়ে ৩৯ মেট্রিক টন ঘন চিনি জব্দ করা হয়। পলি অ্যালুমেনিয়াম ক্লোরাইড নামে দেখিয়ে চীন থেকে এই চালানটি আসে। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর একটি বেসরকারি অফডক থেকে সোডা অ্যাশের নামে আমদানি করা তিনটি কন্টেইনার ভর্তি ৬০ হাজার ৪৮০ কেজি ঘন চিনি জব্দ করা হয়েছিল।

 

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ বলেন, ‘এ ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সোডা অ্যাশ বা পলি অ্যালুমেনিয়াম ক্লোরাইড নামে তা আনার চেষ্টা করছেন। এছাড়া আরও সহজাতীয় বিভিন্ন রাসায়নিকের নাম ব্যবহার করেও সোডিয়াম সাইক্লোমেট দেশে আমদানির প্রবণতা বাড়ছে।’

 

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি নিষিদ্ধ ৩৯ মেট্রিক টন ঘন চিনি জব্দ

 

বাংলাদেশের বাজারে যেখানে প্রতি কেজি সাধারণ চিনি ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে চীনে প্রতি কেজি ঘন চিনির দাম ৩৬৫ টাকা। তবে মিষ্টিগুণ অত্যধিক বেশি হওয়ায় খুব অল্প পরিমাণেই ব্যবহার করা যায়, আর এ সুযোগেই প্রতি কেজিতে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছে আমদানিকারক চক্রটি।

 

মূলত বৈধভাবে আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় শিল্পের কাঁচামালের নাম ব্যবহার করেই দেশে ঘন চিনি ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে আটক হওয়া দুইটি চালানের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে চিহ্নিত করেছে কাস্টমস হাউজের অনুসন্ধানী দল। তাদের লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতিও চলছে।

 

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার এইচ এম কবির বলেন, ‘যারা বিভিন্ন কৌশলে চোখ ফাঁকি দিয়ে এতদিন ঘন চিনি আমদানি করছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলাও করা হবে।’

 

সাধারণ চিনির তুলনায় বহু গুণ বেশি মিষ্টি হওয়ায় মিষ্টান্ন, আইসক্রিম, বেভারেজ, জুস, চকলেট থেকে শুরু করে কনডেন্স মিল্ক-এসব খাদ্যপণ্যে মেশানো হচ্ছে এই ঘন চিনি। এর অধিকাংশই আবার শিশুদের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে শিশুদের জন্য ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘বাচ্চাদের যে পরিমাণ চিনি দরকার, তা এই ঘন চিনিতে নেই। এতে শুধু মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু শরীরে এর প্রভাব ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন