এ দোয়ার প্রতিটি বাক্যে রয়েছে আল্লাহর মহত্ব, তার দয়া ও তার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার গভীর আবেদন পেশ করে।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْۤ اَسْأَلُكَ بِمُحَمَّدٍ نَّبِيِّكَ، وَإِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلِكَ، وَمُوْسٰى نَجِيِّكَ، وَعِيْسٰى رُوْحِكَ وَكَلِمَتِكَ، وَبِكَـلَامِ مُوْسٰى، وَإِنْجِيْلِ عِيْسٰى، وَزَبُوْرِ دَاوٗدَ، وَفُرْقَانِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَبِكُلِّ وَحْيٍ أَوْحَيْتَهٗ، أَوْ قَضَآءٍ قَضَيْتَهٗ، أَوْ سَآئِلٍ أَعْطَيْتَهٗ، أَوْ فَقِيْرٍ أَغْنَيْتَهٗ، أَوْ غَنِىٍّ أَفْقَرْتَهٗ، أَوْ ضَآلٍّ هَدَيْتَهٗ، وَأَسْأَلُكَ بِاسْمِكَ الَّذِيْ وَضَعْتَهٗ عَلَى الْأَرْضِ فَاسْتَقَرَّتْ، وَعَلَى السَّمٰوٰتِ فَاسْتَقَلَّتْ، وَعَلَى الْجِبَالِ فَرَسَتْ، وَاَسْأَلُكَ بِاسْمِكَ الَّذِيْ اسْتَقَرَّ بِه عَرْشُكَ، وَاَسْأَلُكَ بِاسْمِكَ الطَّاهِرِ الْمُطَهَّرِ الْمُنَزَّلِ فِيْ كِتَابِكَ مِنْ لَّدُنْكَ، وَبِاسْمِكَ الَّذِيْ وَضَعْتَهٗ عَلَى النَّهَارِ فَاسْتَنَارَ، وَعَلَى اللَّيْلِ فَأَظْلَمَ، وَبِعَظَمَتِكَ وَكِبْرِيَآئِكَ وَبِنُوْرِ وَجْهِكَ أَنْ تَرْزُقَنِيَ الْقُرْاٰنَ الْعَظِيْمَ، وَتُخَلِّطَهٗ بِلَحْمِيْ وَدَمِيْ وَسَمْعِيْ وَبَصَرِيْ، وَتَسْتَعْمِلَ بِه جَسَدِيْ بِحَوْلِكَ وَقُوَّتِكَ، فَإِنَّهٗ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِكَ. اَللّٰهُمَّ لَاتُـؤْمِنَّا مَكْرَكَ، وَلَا تُنْسِنَا ذِكْرَكَ، وَلَا تَهْتِكْ عَنَّا سِتْرَكَ، وَلَا تَجْعَلْنَا مِنَ الْغَافِلِيْنَ.
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিমুহাম্মাদিন নাবিইয়্যিকা, ওয়া ইব্রাহীমা খালীলিকা, ওয়া মূসা নাজিইয়্যিকা, ওয়া ঈসা রূহিকা ওয়া কালিমাতিকা, ওয়া বিকালামি মূসা, ওয়া ইনজিলি ঈসা, ওয়া যাবূরি দাউদ, ওয়া ফুরক্বানি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা। ওয়া বিকুল্লি ওহইন আওহাইতাহু, আও ক্বাদাআ ক্বাদাইতাহু, আও সায়িলিন আ’আতাইতাহু, আও ফাক্বীরিন আঘনাইতাহু, আও গনিইয়্যিন আফক্বারতাহু, আও দ্বাল্লিন হাদাইতাহু। ওয়া আসআলুকা বিইসমিকা আল্লাযি ওয়াদাআতাহু আলাল আরদ ফাসতাক্বর্রাত, ওয়া আলাসসামাওয়াতি ফাসতাক্বাল্লাত, ওয়া আলাল জিবালি ফারসাত।
আরও পড়ুন: রজব মাসের ফজিলত ও আমল
ওয়া আসআলুকা বিইসমিকা আল্লাযি ইস্তাক্বর্রা বিহি আরশুকা, ওয়া আসআলুকা বিইসমিকাত-তাহিরিল মুতাহ্হারিল মুনায্যালি ফি কিতাবিকা মিন লাদুন্কা, ওয়া বিইসমিকাল্লাযি ওয়াদাআতাহু আলান্নাহারি ফাসতানারা, ওয়া আলাল লাইলি ফা-অয্লামা।স ওয়া বিআযমাতিকা ওয়া কিবরিয়াইক, ওয়া বিনূরি ওয়াজহিক, আন্ তারযুক্বানি আল-কুরআনাল আযীমা, ওয়া তুখাল্লিতাহু বিলাহমি ওয়া দামি ওয়া সাম’ই ওয়া বাস্বারি, ওয়া তাস্তাআমিলা বিহি জাসাদী বিহাওলিকা ওয়া কুওয়াতিকা। ফা-ইন্নাহু লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিক। আল্লাহুম্মা লা তু-আমিন্না মাকরাকা, ওয়া লা তুনসিনা জিক্রাকা, ওয়া লা তাহ্তিক আন্না সিত্রাকা, ওয়া লা তাজআল্না মিনাল গাফিলীন।
অর্থ: ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছে প্রার্থনা করছি মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে অসিলায়, যিনি আপনার নবী, ইবরাহীম আ.-এর অসিলায়, যিনি আপনার খলীল; মূসা আ.-এর অসিলায়, যিনি আপনার ‘কালীম’ কথোপকথনকারী, ঈসা আ.-এর অসিলায়, যিনি আপনার ‘কালিমা’ ও ‘রূহ’ এবং মূসা আ.-এর কালামের (তাওরাত) অসিলায়, ঈসা আ.-এর ইনজীলের অসিলায়, দাউদ আ.-এর যাবুরের অসিলায়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুরআনের অসিলায়। আপনার অহীর অসিলায়, যা আপনি প্রেরণ করেছেন, আপনার প্রত্যেক (জাগতিক) বিধানের অসিলায়, যা আপনি জারি করেছেন; প্রত্যেক প্রার্থনাকারীর অসিলায়, যাকে আপনি দান করেছেন; প্রত্যেক দরিদ্রের অসিলায়, যাকে আপনি ধনী করেছেন; প্রত্যেক ধনীর অসিলায়, যাকে আপনি ফকীর বানিয়েছেন; প্রত্যেক গোমরাহ ব্যক্তির অসিলায়, যাকে আপনি হেদায়েত দিয়েছেন।
আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনার ঐ গুণের অসিলায়, যা আপনি ভূমিতে স্থাপন করেছেন; ফলে ভূমি স্থির হয়েছে; আসমানে স্থাপন করেছেন; যাতে আসমান স্থিতি লাভ করেছে, পাহাড়-পর্বতে স্থাপন করেছেন; ফলে তা সুদৃঢ় হয়েছে; প্রার্থনা করছি আপনার ঐ নামের অসিলায়, যার দ্বারা আপনার আরশ স্থির হয়েছে। প্রার্থনা করছি আপনার কাছে আপনার ঐ গুণের অসিলায়, যা পবিত্র ও শুচি-শুভ্র এবং আপনার পক্ষ হতে আপনার কিতাবে নাযিলকৃত; এবং আপনার গুণের অসিলায়, যা আপনি দিবসের উপর স্থাপন করেছেন; ফলে তা উজ্জ্বল হয়েছে এবং রাতের উপর রেখেছেন; ফলে তা অন্ধকার হয়েছে। আপনার বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অসিলায় এবং আপনার সত্তার জ্যোতির অসিলায় (প্রার্থনা করছি যে) আপনি আমাকে কুরআনে আযীম দান করুন এবং তা আমার রক্ত-মাংসে, শ্রবণ ও দৃষ্টিতে মিশিয়ে দিন আর সে অনুযায়ী আমার দেহকে পরিচালিত করুন আপনার শক্তি ও ক্ষমতায়। নিশ্চয়ই সম্ভব নয় (গুনাহ থেকে) বাঁচা আর না (নেক আমলের) সামর্থ্য আপনার সাহায্য ছাড়া। ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার গোপন কৌশল সম্পর্কে শঙ্কাহীন কোরেন না, আপনার স্মরণ থেকে আমাদের গাফেল কোরেন না, আমাদের উপর থেকে আপনার পর্দা সরিয়ে নিয়েন না, আর আমাদের গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত কোরেন না।
এখানে اسم (ইসম) অর্থ গুণ। কারণ, ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, আরবীতে ইসম শব্দটি গুণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আর জগত-মহাজগতের এই নিপুণ ব্যবস্থা তো আল্লাহর গুণাবলীরই প্রকাশ। এরই ফলে আকাশ ও আরশ, জমি ও পর্বত নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। ঐ গুণাবলীরই কারিশমা, যা দিনকে দিন ও রাতকে রাত বানিয়েছে। অর্থাৎ কুরআনের শিক্ষা ও মাহাত্ম্য যেন আমার দেহ-আত্মার অণুতে-পরমাণুতে মিশে যায়। আমি যেন কোরআনের নজরেই দেখি, কোরআনের কানেই শুনি, কোরআনের মস্তিষ্কের দ্বারাই চিন্তা করি আর কোনো কাজ করলে কুরআনের শক্তিতেই যেন করি, সর্বপ্রকার ও সর্বদিক থেকে কুরআনই যেন আমার জীবনে ছায়া বিস্তার করে।
অর্থাৎ আপনি চাইলেই আমাদের গুনাহ থেকে রক্ষা করতে পারেন। আপনি চাইলেই আমাদের নেক আমলে মশগুল করতে পারেন। ভালো ও মন্দ, গুনাহ বর্জন ও নেক আমল সম্পাদনের সকল শক্তি একমাত্র আপনারই হাতে। অর্থাৎ আপনার পাকড়াও সম্পর্কে যা অতি সূক্ষ্ম হয়ে থাকে, আমাদের মনে যেন বেপরোয়া ভাব সৃষ্টি না হয়। সর্বাবস্থায় ঐ বিষয়ে আমাদের ভীত ও সন্ত্রস্ত রাখুন। আমরা যেন আপনাকে ভুলে না যাই। সর্বাবস্থায় আমাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখুন এবং আমাদের গাফলতের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করুন।
আরও পড়ুন: রজব মাস আসলেই নবীজি যে দোয়া পড়তেন
এ দোয়া আমাদের শিখিয়ে দেয় যে আল্লাহর কাছে সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞ থাকা এবং তার থেকে অনুগ্রহ প্রার্থনা করা একজন মুমিনের জীবনের অপরিহার্য অংশ। আল্লাহর গুণাবলীর অসিলায় দোয়া করলে তা আরও বেশি ফলপ্রসূ হয়। পাশাপাশি, কোরআনকে জীবনের অংশ বানানো, আল্লাহর স্মরণে গাফিল না হওয়া এবং তার দয়া ও রহমত কামনা করা আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের এই দোয়ার বরকত দান করুন এবং আমাদের জীবনে কুরআনের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটান। আমিন।