বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে সকালে পাসপোর্ট অফিসের সামনে শালবাগান বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগীরা। সেখানে বক্তারা অভিযোগ করেন, পাসপোর্ট অফিসে যেসব ফাইল দালালের মাধ্যমে আসে, সেগুলোর কাজ দ্রুত হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহান। বক্তারা ডিডি রোজী খন্দকারের অপসারণও দাবি করেন। ‘ভুক্তভোগী রাজশাহীর সাধারণ জনগণ’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন শেষে ‘ভুক্তভোগীরা’ ডিডির কার্যালয়ে যান। তাদের সঙ্গে সাংবাদিকেরাও ছিলেন। সেই সময়ের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিকমাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ‘অনিয়মের প্রতিবাদকারী’ ব্যক্তিরা যখন ডিডির কক্ষে প্রবেশ করছেন, তখন মোবাইলে কথা বলছেন ডিডি। এ সময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান জানতে চান, ‘আপনি টেলিফোন করছেন কাকে?’ ডিডি তখন বলেন, ‘আপনি কাইন্ডলি বসেন। আমি মেজর জেনারেল স্যারের সঙ্গে কথা বলছি।’ এ সময় জামাত খান বলেন, ‘আরে রাখেন আপনার মেজর জেনারেল।’ ধমক দিয়ে জামাত খান বলতে থাকেন, ‘রাখেন আপনি। আপনি যখন ঘুষ নেন, তখন ওই মেজর জেনারেল ইয়া করে না?’
আরও পড়ুন: রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন
ফোন কানে ধরেই ডিডি রোজী খন্দকার জামাত খানকে বলেন, ‘আপনি প্লিজ প্রমাণ দিবেন। আপনি প্রমাণ দিয়ে কথা বলবেন।’ এ নিয়ে কিছু সময় ধরে দুজনের বাদানুবাদ চলে। এরপর জামাত খান বলেন, ‘আপনি আপনার অফিসের সমস্ত অনিয়ম দূর করবেন। আপনাকে একমাসের সময় দেয়া হলো।’ ওই সময় ডিডির কক্ষে থাকা একজন আনসার সদস্যও তোপের মুখে পড়েন। ইউনিফর্মে নেমপ্লেট না থাকার কারণে তাকে ঘিরে ধরা হয়। কেউ কেউ বলেন, এই আনসার সদস্য দুর্নীতির সহায়তাকারী। কিছু সময় পর সবাই ডিডির কক্ষ থেকে বের হয়ে চলে আসেন। পরে বিকেলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ডিডি।
অভিযোগের বিষয় হিসেবে লেখা হয়, ‘পাসপোর্ট অফিসে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে।’ অভিযোগে লেখা হয়, সকাল আনুমানিক ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আবু সাঈদ, জামাত খানসহ ৪০-৪৫ জন আকস্মিকভাবে ক্যামেরা চালু করে রোজী খন্দকারের কক্ষে প্রবেশ করেন। রোজী খন্দকার তাৎক্ষণিক পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে ফোন করলে জামাত খান তাকে উচ্চস্বরে ধমক দেন এবং অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেন।
অভিযোগে ডিডি রোজী খন্দকার লেখেন, ‘শান্ত হয়ে অনিয়মের প্রমাণাদি দাখিল করতে বলা হলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আমাকে একমাসের আলটিমেটাম দেন অনিয়ম দূর করার জন্য। অফিসে আসা আবু সাঈদ মোয়াল্লেমের দায়িত্বে আছেন। সেই সুবাদে তিনি প্রায়ই হাজিদের নিয়ে অফিসে আসেন এবং সেবা নিয়ে যান। গত ১৮ নভেম্বরেও তিনি দুজন হাজি আবেদনকারীর সেবা নিয়ে যান। পরবর্তীতে জানা যায়, এই আবু সাঈদের উদ্যোগে মানববন্ধনসহ আমার কক্ষে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালিত হয়।’
আরও পড়ুন: দালালদের কথায় সব হয় মুন্সীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে!
থানায় অভিযোগ করার ব্যাপারে কথা বলতে সন্ধ্যায় ডিডি রোজী খন্দকারকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।
এর আগে দুপুরে তিনি তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।
নগরের চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ডিডি রোজী খন্দকার একটা অভিযোগ পাঠিয়েছেন থানায়। আমি সিনিয়র স্যারদের সঙ্গে কথা বলব। তারপর এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করব।’