আরও একবার সংবিধানে সংশোধনী আনছে পাকিস্তান, কী আছে বিলে?

২ সপ্তাহ আগে
দেশের সংবিধানে আরও একবার সংশোধনী আনছে পাকিস্তান। ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল এরই মধ্যে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে উত্থাপন করা হয়েছে। এতে সেনাবাহিনী ও সামরিক নেতৃত্বকে আরও ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেনাপ্রধান আসিম মু্নিরের জন্য ফিল্ড মার্শাল পদ সৃষ্টি এবং উচ্চ আদালত কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ডনের প্রতিবেদন মতে, পাকিস্তানে বিরোধী দলগুলোর তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদের মুখে গত শনিবার (৮ নভেম্বর) সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিলটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠক পরিচালনা করেন।

 

আজারবাইজানের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এখন সেখানেই অবস্থান করছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে রয়েছেন সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ২৬ পৃষ্ঠার বিলটি সিনেটে উত্থাপন করা হয়। উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার।

 

আরও পড়ুন: করাচি-চট্টগ্রাম সরাসরি শিপিং শুরু হয়েছে: পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

 

সিনেট চেয়ারম্যান ইউসুফ রাজা গিলানি বিলটি উচ্চকক্ষের আইন ও বিচার বিষয়ক কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন। তারা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটির সঙ্গে যৌথ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে। বিলটি পাস হলে ‘সংবিধান (২৭তম সংশোধনী) আইন, ২০২৫’ নামে পরিচিত হবে।

 

বিরোধীদলগুলো বলেছে, সরকার বিলটি খুব দ্রুত পাস করাতে চাইছে। আইন বিশেষজ্ঞরা এই বিলকে প্রাদেশিক সরকারের অধিকার হ্রাস এবং সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত করার চেষ্টা বলে সমালোচনা করেছেন। তবে সরকার বলছে, এটি গণতন্ত্রের জন্য কোনো হুমকি নয়।

 

কী আছে ২৭তম সংশোধনী বিলে

 

ডনের প্রতিবেদন মতে, এই বিলের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থায় কয়েকটি বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব তোলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ নামে নতুন একটি আদালত গঠনের বিষয়, যা শুধু সংবিধান সংক্রান্ত মামলা নিয়ে কাজ করবে।

 

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট ও উচ্চ আদালতগুলোর যেসব মামলায় সংবিধান ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়, সেসব ভবিষ্যতে গঠিত এই নতুন আদালতে স্থানান্তরিত হবে।

 

বিল মোতাবেক, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি সামরিক নেতৃত্ব কাঠামো বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে।

 

সিজেসিএসসির পদ না রাখা

 

প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, বর্তমান চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি’র (সিজেসিএসসি) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিলুপ্ত করা হবে পদটি। তারপর নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে।

 

এতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সেনাপ্রধানই। আর সেনাপ্রধানের সুপারিশ অনুযায়ী ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধানকে নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।

 

সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে থাকবে। কিছু নতুন ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। এতে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেয়া হয়েছে।

 

প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার ও বিচার থেকে আজীবন অব্যাহতি

 

নতুন এ বিলটিতে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, ২৪৮ অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে প্রেসিডেন্টকে আজীবন ফৌজদারি মামলা বা গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে অব্যাহতি (ইমিউনিটি) প্রদান করা হবে। তবে গর্ভনরদের ক্ষেত্রে শুধু তাদের দায়িত্ব পালনকালে এই সুরক্ষা থাকবে। আর বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ও গর্ভনর দু’জনই এ সুরক্ষা শুধু মেয়াদকালে পাবেন।

 

নতুন এ বিলে প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার আকারও বাড়ানো হবে। সংবিধানের বর্তমান বিধান মোতাবেক সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার ১১ শতাংশ পর্যন্ত মন্ত্রী রাখার নিয়ম রয়েছে। তবে নতুন প্রস্তাবে এটি বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৩ শতাংশ।

 

বিচার বিভাগের সংস্কার

 

সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বিচার বিভাগে বড় পরিবর্তন আনছে ইসলামাবাদ। এতে পাক সুপ্রিম কোর্টের কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই ইচ্ছামতো বিচারক এবং বিচারপতিদের বদলির ক্ষমতা পাবে কেন্দ্রীয় সরকার।

 

এছাড়া প্রস্তাবিত বিলে একটি সাংবিধানিক আদালত তৈরির কথা বলা হয়েছে। এতে অবশ্য আগের চেয়ে বেশি ক্ষমতা পাবেন পাক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। 

 

পাশাপাশি জেলাস্তরের আদালতে ছোটখাটো অপরাধের বিচারের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগের উল্লেখ রয়েছে সংবিধান সংশোধনী বিলে। নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার উদ্দেশ্যে এটা করতে চাইছে শেহবাজ সরকার।

 

প্রাদেশিক সরকারের শক্তি এবং বাজেট বরাদ্দ হ্রাস 

 

প্রস্তাবিত বিলটিতে প্রাদেশিক সরকারের শক্তি এবং বাজেট বরাদ্দ হ্রাসের ইঙ্গিত রয়েছে। বর্তমানে চার প্রদেশের জন্য গড়ে কেন্দ্রীয় বাজেটের ৫৭ শতাংশ বরাদ্দ ধার্য করে থাকে পাক সরকার। প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে সেটা কমিয়ে ৪৫ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে শেহবাজ প্রশাসন।

 

ফলে সংবিধান সংশোধন হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের খরচ কাটছাঁট হবে বলে জানিয়েছে একাধিক স্থানীয় গণমাধ্যম। এতে অবশ্য ইসলামাবাদের প্রদেশগুলোতে বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দেয়ার আশঙ্কা বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।

 

ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্টের আশঙ্কা

 

পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিল সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এ বিলটি পাস হলে এতে দেশটির বিচার বিভাগ, নির্বাহী শাখা ও সামরিক কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে বিশাল পরিবর্তন আসার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে নতুন সাংবিধানিক আদালত গঠন এবং রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তির প্রস্তাব ক্ষমতার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন