আয়াতুল কুরসির শক্তি

৩ দিন আগে
আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি আয়াতেরই নিজস্ব মর্যাদা রয়েছে। তবে কুরআনের কিছু আয়াত বিশেষভাবে প্রাধান্য লাভ করেছে। সেগুলোর একটি হলো আয়াতুল কুরসি।

আরবি:

اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

 

বাংলা উচ্চারণ:

আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা-হুয়াল-হাইয়্যুল-ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাওম। লাহু মা ফিস্-সামা-ওয়া-তি ওয়া মা ফিল-আরদ্ব। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ ‘ইন্দাহু ইল্লা-য়া-য্বনি-হি। ইআলামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়া মা খাল্ফাহুম। ওয়া লা ইউহীতোনা বি শাই-ইম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ। ওয়া সি‘আ কুরসিইয়্যুহুস্-সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফযুহুমা। ওয়া হুয়াল আলিয়্যুল আজীম।

 

অর্থ: আল্লাহ! তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক ও পালনকর্তা। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। কে আছ যে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করতে পারে? তিনি জানেন যা তাদের সামনে এবং যা তাদের পেছনে। তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, তবে যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তাই। তাঁর কুরসি আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করেছে, এবং সেগুলোর সংরক্ষণ তাঁকে কোনো ক্লান্তি দেয় না। আর তিনি সর্বোচ্চ, মহামহান। (সুরা আল-বাকারাহ – ২:২৫৫)

 

আয়াতুল কুরসির গুরুত্ব

 

কুরআন তিলাওয়াত দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্তির একটি বড় উপায়। এর মধ্যে একটি বিশেষ আয়াত আছে, যা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ অসংখ্য হাদীসে বলেছেন সেটি হলো আয়াতুল কুরসি।

 

আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সিরাতের বই ‘নবীজির প্রিয় ১০০’

 

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে রমজানের যাকাত পাহারার দায়িত্ব দিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে খাদ্যসামগ্রী চুরি করতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহর কাছে নিয়ে যাব। … তখন সে বলল, তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দাও আমি তোমাকে এমন কিছু কথা শিখাব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকার করবেন। তুমি যখন বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। এর ফলে সারা রাত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন প্রহরী তোমাকে পাহারা দেবে, আর শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। রসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে যদিও মিথ্যাবাদী, কিন্তু এবার সে সত্য বলেছে। (বুখারি, কিতাবুল ওয়াকালা, হাদিস: ৫৩০)

 

হযরত আলী (রা.) বলেছেন, কুরআনের আয়াতসমূহের নেতা হলো আয়াতুল কুরসি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন: “আল্লাহ আসমান ও জমিনে আয়াতুল কুরসির চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু সৃষ্টি করেননি। (তিরমিজি ২৮৮৪)

 

সকালে পাঠ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজতে থাকবেন। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পড়লে ফেরেশতারা পাহারা দেবে। ঘুমানোর আগে পড়লে রাতভর আল্লাহর পাহারায় থাকবেন। নিয়মিত পড়লে শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবেন। ঘরে প্রবেশের সময় পড়লে দারিদ্রতা সেই ঘরে প্রবেশ করবে না।

 

রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

 

যে ব্যক্তি প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে শুধু মৃত্যুই বাধা হয়ে থাকে। (আন-নাসাঈ, ইবন হিব্বান)

 

রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কুরআনের প্রতিটি জিনিসের একটি শিখর আছে, আর কুরআনের শিখর হলো সূরা আল-বাকারাহ। এতে একটি আয়াত আছে, যা আয়াতসমূহের নেতা; সেটি হলো আয়াতুল কুরসি। (তিরমিজি ২৮৭৮) আল-বায়হাকীতে এসেছে, যে ব্যক্তি প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জান্নাতে প্রবেশের অন্তরায় শুধু মৃত্যু। আয়ফা ইবনে আবদুল কিলাঈ (রা.) বর্ণনা করেন,

 

রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সবচেয়ে বড় সূরা হলো ‘কুল হু আল্লাহু আহাদ’ এবং সবচেয়ে বড় আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। (তিরমিজি ২১৬৯)

 

আরেকটি হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি সকালে সুরা হামিম আল-মুমিন থেকে (إِلَيْهِ الْمَصِيرُ) পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরসি পড়ে, সন্ধ্যা পর্যন্ত সে সুরক্ষিত থাকবে। আর সন্ধ্যায় পড়লে সকাল পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকবে। (তিরমিজি ২১৪৪)
 

আয়াতুল কুরসি কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত। এটি আল্লাহর একত্ব, মহাশক্তি, জ্ঞান, কুদরতের ঘোষণা। এটি পড়া মুমিনের জন্য সুরক্ষা, বরকত, জান্নাতের প্রতিশ্রুতি ও শয়তান থেকে মুক্তির বড় উপায়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন