আমন ধানে মাজরা পোকার হানা, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় কুষ্টিয়ার চাষিরা

১ সপ্তাহে আগে
আমনের ভরা মৌসুমে মাজড়া পোকার প্রকোপ দেখা দিয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়। কৃষকরা বলছেন, বারবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কৃষি কর্মকর্তারাও পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছেন না। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা এলাকার কৃষক মনিরুল। চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। চলতি আমন মৌসুমে সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে তার।

 

এদিকে গাছ সবুজ হওয়ার পরপরই জমিতে মাজরা পোকা আক্রমণ শুরু করেছে। গত মৌসুমে দুইবার কীটনাশক ছিটিয়ে পোকা দমন করা সম্ভব হয়েছিল, কিন্তু এবার চারবার কীটনাশক ছিটিয়েও কার্যকর ফল পাচ্ছেন না। অতিবৃষ্টি ও পরবর্তী গরমের কারণে ধানেও মাজরা, পাতা মোড়ানো, কারেন্ট, গান্ধীসহ নানা ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে মনিরুল মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে ফসল উৎপাদনের খরচ এবার আরও বাড়বে।

 

শুধু মনিরুল নয়; কুমারখালীর চাপড়া, যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর ও বাগুলাট ইউনিয়নের চাষিরা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চাষ করছেন ধান। তবে উপজেলার জিকে সেচ প্রকল্প এলাকাসহ বিভিন্ন ধান ক্ষেতে মাজড়া পোকা আক্রমণ দেখা দিয়েছে। অনেক গাছের আগায় বসে আছে পোকা। এ কারণে অনেক ধান নষ্ট হচ্ছে।

 

সরজমিনে এসব এলাকার ধানক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কীটনাশক ছিটাচ্ছেন; কেউ সার প্রয়োগে ব্যস্ত। কেউ আবার আগাছা পরিষ্কার করছেন। ক্ষেতের বিভিন্ন অংশে ধান গাছ মরে ফাঁকা হয়ে গেছে, আর কোনো কোনো গাছের মাথা লালচে হয়ে পড়েছে। কৃষকেরা বলছেন, বার বার কীটনাশক প্রয়োগ করেও মিলছে না কোনো সমাধান। এতে সৃষ্টি হয়েছে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা।

 

আরও পড়ুন: ধান কাটার আগে পোকার আক্রমণ, গাইবান্ধায় কৃষকের মুখে হতাশার ছায়া

 

চাপড়া ইউনিয়নের চাপড়া ব্রিজ এলাকার কৃষক মো. লালু জানান, চলতি বছর প্রতি বস্তা সার কিনতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। ওষুধের বোতলেও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি লাগছে। তারপরও পোকামাকড়ের আক্রমণে ধান নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চাষে আসল মুনাফা ওঠানো এবার মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক সোলেমান শেখ জানিয়েছেন, একবার স্প্রে করতে চার থেকে পাঁচশ’ টাকা খরচ হচ্ছে। এরই মধ্যে চারবার স্প্রে করা হয়েছে, আরও কয়েকবার লাগবে। এভাবে অনেকবার স্প্রে করলে লাভ পাওয়া সম্ভব নয়।

 

একই গ্রামের আব্দুল হান্নান মোল্লা সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ইজারা, চাষ, চারা রোপণ ও পরিচর্যায় শ্রমিক খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি। গত বছর বিঘা প্রতি ফলন হয়েছিল ১০-১৫ মণ, তবে চলতি বছর তা ৮-১০ মণের বেশি হবে না।

 

এমনকি, কৃষি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার অভিযোগও চাষিদের। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমনে মাজরাসহ বিভিন্ন ধরনের পোকা আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১৪ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। জমির ইজারা, বীজ, সার, চাষ ও পরিচর্যার জন্য প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ১৫-২০ মণ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত ধান থেকে প্রায় ১.৫ টন চাল পাওয়া যায়।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন