পার্বত্য এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য ১৯৭৬ সাল জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় স্থাপন করা হয় প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৮৩ সালে বাণিজ্যক উৎপাদনে যায়। সে সময়ে জৌলুস ছড়ানো মিলটির এখন করুণ দশা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে ধরেছে ফাটল। ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। সেখানে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে কোটি টাকার সব যন্ত্রপাতি। ছাদ চুইয়ে পড়া পানি থেকে মেশিন রক্ষা করতে কোথাও কোথাও দেয়া হয়েছে পলিথিন। তাতেও রক্ষা পাচ্ছে যন্ত্রপাতি। ভিজে মরিচা ধরেছে মেশিনে।
দেখে বুঝার উপায় নেই এক সময় এই কারখানায় তুলা থেকে উৎপাদন করা হতো উন্নত মানের সুতা।
আরও পড়ুন: পাতার অভাবে বন্ধ অধিকাংশ চা কারখানা!
সংশ্লিষ্টরা জানান, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেশিনের আধুনিকায়ন না করাসহ বেশ কিছু কারণে বেড়ে যায় রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলসের লোকসান। তাই ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে প্রায় এক হাজার শ্রমিককে ধাপে ধাপে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় করে দেয়া হয়। এরপর দুই দফায় সার্ভিস চার্জ পদ্ধতির মাধ্যমে চালু করা হয়। কিন্তু তাতেও আসেনি সফলতা। এমন বাস্তবতায় সম্প্রতি কারখানাটি ধরন পরিবর্তন করে নতুনভাবে চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অর্থ, শিল্প ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করায় আশায় বুক বাঁধছেন সাবেক কর্মচারী ও স্থানীয়রা।
মিলের সাবেক শ্রমিক শহীদ মিয়া বলেন, ‘এই মিলটি দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মিল ছিল। একবার এটি দেশের সেরা মিল নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন কিছু লোকের কারণে মালটি বসে গেছে। আমরা চাকরি হারিয়েছি।’

এ বিষয়ে মিলটির একসময়ের শ্রমিক সুশান্ত চাকমা বলেন, ‘১২ বছর এই কারখানায় কাজ করে সংসার চালিয়েছি। মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এটি চালু হলে আমাদের খুব উপকার হবে। সরকারে কাছে দাবি জানাই যাতে এই মিলটি চালু করা হয়।’
আরও পড়ুন: ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নীলফামারীতে শিল্প কারখানা চালু
রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিলস এর ব্যবস্থাপক মো. মাহবুব আলম বলেন,‘কারখানার যন্ত্রপাতির লাইফ টাইম শেষ হয়ে গেছে। তাই চাইলেও এই সব মেশিনে উৎপাদন করে মিলটিকে লাভজনক স্থানে নেয়া যাবে না। সে কারণে এখন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখনে বর্তমানে ১৯ জন গার্ড আর আমি দায়িত্ব পালন করছি।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘কারখানাটি ধরন বদলে নতুন করে চালুর বিষয়ে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে এই এলাকায় বিশেষভাবে অবদান রাখতে পারে। তেমন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আমরা চাই এই এলাকার মানুষ যাতে এখানে কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি এখানকার ঐতিহ্যও রক্ষা পায়।’
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্ণফুলী পেপার মিল সচল করার দাবি
তিনি আরও বলেন, ‘তিনটি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পরিদর্শন করেছে। আশা করি দ্রুত এই এলাকার মানুষ সুখবর পাবেন। তবে এবার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনার শিপের মাধ্যমে চালু করার কথা ভাবছি।’
প্রায় ৩১ একর জায়গা নিয়ে স্থাপিত মিলটি ১৯৮৩ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে এবং ২০০৯ সালে বন্ধ হয়ে যায়।