৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে ৬ জনকে হত্যা মামলার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালে এই কথা বলেন তিনি।
মামলার ১৯তম সাক্ষী ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিন বেলা ২টার দিকে ট্রাইব্যুনালে আসেন তিনি। পরে এজলাসে আসেন ২টা ৩৫ মিনিটে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। জবানবন্দিতে কীভাবে কোটা সংস্কারের আন্দোলন সরকারি বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিলো তার ধারা বর্ণনা দেন তিনি। জুলাই আগস্টে হত্যাযজ্ঞের জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে দায়ী করেন আসিফ মাহমুদ।
আসিফ মাহমুদের জবানবন্দি শেষ না হওয়ায় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
আসিফ মাহমুদ জবানবন্দিতে বলেন, ‘কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং ব্লক রেইড দিয়ে ব্যাপক মাত্রায় ধরপাকড় শুরু করা হয়। সেদিন রাতে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। ওই দিন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে গুলিবর্ষণ করে। সেদিন সারা দেশে কমপক্ষে ২৯ জন আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার খবর পাই। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের সঙ্গে আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য যোগাযোগ করে।’
আরও পড়ুন: ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে এবার ফেসবুকে পোস্ট উপদেষ্টা আসিফের
আসিফ মাহমুদ বলেন,
১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। ওই দিন সারা দেশে শতাধিক নিহত হওয়ার খবর পাই। সেদিন রাতে ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ডিবি পরিচয়ে কিছু লোক আমাকে মাথায় কালো টুপি পরিয়ে তুলে নিয়ে যায়। ওই রাতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে আন্দোলন প্রত্যাহারে একটি ভিডিও বার্তা প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমি রাজি না হলে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলে রাখে। ২৪ জুলাই সকালে আমাকে নিকেতনস্থ সেই স্থানে রেখে যায়। আমাকে তুলে নিয়ে যে রুমে রাখা হয় তা ৫ আগস্ট পরবর্তীকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে বুঝতে পারি, এটি সেই জায়গা।
সাক্ষ্যে আসিফ মাহমুদ জানান, ২৬ জুলাই তাকেসহ তিন সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। পরে আরো তিনজন সমন্বয়ককে আনা হয় ডিবি কার্যালয়ে। তখন ডিবি থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে হত্যা করার। তারা দয়া করে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সে সময় ডিবির লিখে দেয়া আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য জোর করে পাঠ করিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
গুমের মামলায় শেখ হাসিনাসহ সাবেক বর্তমান ২৩ সেনা কর্মকর্তার বিচার প্রক্রিয়া শুরুকে মাইলফলক হিসেবে দেখছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নানা চাপ থাকলেও বিচারের মুখোমুখি করতে অনড় ছিলো সরকার।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, গণহত্যাকারী এই দলকে রাজনীতিতে ফিরতে দেবে না দেশের মানুষ।
এর আগে গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ডিজিএফআইয়ের সাবেক ৫ মহাপরিচালকসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট ১২ দফতরে।