রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আলী আকবর জুলহাস ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাসিবুল ইসলাম (হৃদয়) স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি দেয়া হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৈরি করা হয় ফ্যাসিবাদী মনস্তত্ত্ব উৎপাদন ও অপশাসন কায়েমের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে। ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করে চলেছে শিক্ষার্থী নিপীড়ন। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছিল ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। দলীয় রাজনীতি ও পদলেহন ছাড়া ক্যাম্পাসের সমস্যা নিরসনে কলেজ প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ অতীতে দেখা যায়নি।
তাই ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে একটি ‘বৈষম্যহীন ও নিরাপদ ক্যাম্পাস’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, মৌলিক সংকট চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে এই ক্যাম্পাস সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের প্রাণের ঠিকানা হয়ে উঠবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন নিয়ে মারামারি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ৩১ দফা প্রস্তাব
চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে আনন্দ মোহন কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী ফ্যাসিবাদের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছিল, প্রত্যক্ষভাবে গণহত্যাকে সমর্থন ও পরোক্ষভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল তাদেরকে চিহ্নিত করে অতিদ্রুত তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পতিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদের দোসর ও আইকনদের নামে আনন্দ মোহন কলেজ ক্যাম্পাসে যে সকল হল ও অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে তা অবিলম্বে পরিবর্তন করে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে নামকরণ করতে হবে।
জুলাই গণহত্যা বিষয়ে বিভিন্ন রকম কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে এবং পর্যাপ্ত গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নির্মম ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি, বিগত ১৬ বছরের নিপীড়ন ও জুলাই গণহত্যার দায়ে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম আনন্দ মোহন কলেজ ক্যাম্পাসে আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সকল ছাত্র-ছাত্রীদের হলগুলোতে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিতে হবে। সিট নবায়নের সময় কোনো ধরনের দলীয়, ধর্মীয় ভেদাভেদ না করে বৈধতা ও প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে নিরপেক্ষভাবে সিট বণ্টন করতে হবে। হলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের চিহ্নিত কোনো অপরাধী অবস্থান করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। হলে বৈধভাবে সিটের অধিকারী কেউ যেন হল ছাড়তে বাধ্য না হয় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।
আরও পড়ুন: এইচএসসির প্রশ্নে ব্যান্ডের নাম, ‘প্রণেতাদের মধ্যে দেশপ্রেম নাই’
‘শিক্ষা সবার মৌলিক অধিকার’ এই স্লোগানকে ধারণ করে হলগুলোর আবাসন ফি পাঁচ হাজার পাঁচশত টাকা করতে হবে। হল চলবে প্রশাসনিক নীতিতে। সিট বণ্টনসহ সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে হল প্রশাসন। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যাতে কোনো রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ম বর্ষ থেকেই ছাত্রী হলে সিট বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।
হলে খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। হলগুলোতে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে রিডিং রুম ও লাইব্রেরির পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। ক্যাম্পাসে ছেলেদের হল সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। হলে ছাত্রদের জন্য আধুনিক শৌচাগার নির্মাণ করতে হবে। হলের রুমে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা সিট নিশ্চিত করতে হবে। হল ভিত্তিক আলাদা ডাইনিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং ডাইনিং-এর কর্মচারীদের ছাত্রবান্ধব আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে যেন জোরপূর্বক কোনো রাজনীতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য না করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাম্পাসের ভবনসমূহের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের চারদিকে মজবুত সীমানা প্রাচীর তৈরি করতে হবে। ধুমপানমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্য দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে শব্দ দূষণ হয় এমন সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। ক্যাম্পাসে আধুনিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে এবং সার্বক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যাম্পাসে অত্যাধুনিক লাইব্রেরি স্থাপন করতে হবে, লাইব্রেরিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণামূলক বইয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সমসাময়িক পত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদি সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভাগ ভিত্তিক গবেষণার জন্য প্রতি বছরের বাজেট থেকে বরাদ্দ রাখতে হবে।
ক্যাম্পাসের সকল ধরনের শিক্ষার্থীদের ধর্মচর্চার অবাধ সুযোগ দিতে হবে এবং সকল ধর্মের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় আচার পালনের জন্য উপাসনা কক্ষ তৈরি করতে হবে। খেলার মাঠ স্থায়ীভাবে সংস্কার করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে সাইকেল স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে আধুনিক ক্যান্টিন নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্যান্টিনে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী মূল্যে নাস্তা ও অন্যান্য খাবার সরবরাহ করতে হবে।
আরও পড়ুন: আনন্দমোহন কলেজ হোস্টেল বন্ধ ঘোষণা
শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করতে হবে। কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রমে আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের আবেদন, টাকা জমা ইত্যাদি কার্যক্রমে অনলাইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে হবে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ সক্রিয় করার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু রাজনীতির প্রবর্তন এবং কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাবি-দাওয়া পেশের একটি সুন্দর সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আলী আকবর জুলহাস বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংকট ও প্রত্যাশা বিবেচনা করে প্রস্তাবনার আলোকে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অধ্যক্ষও আশ্বাস দিয়েছেন পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের।’
আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ৩১ দফা দাবি জানিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আরও সংগঠন থেকেও এসেছে। বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।’