‘আনঅফিসিয়াল ফোন চলবে না’— সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে বাজারে কী প্রভাব?

১ সপ্তাহে আগে
টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার রোধে চালু করা হচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম। এর ফলে দেশের নেটওয়ার্কে নিবন্ধনহীন বা আনঅফিসিয়াল মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধ হবে। নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগে অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন আনঅফিসিয়াল ফোন কিনতে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ এই পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে অনেকে এটিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বরের পর বিক্রি হওয়া বা নেটওয়ার্কে চালু হওয়া সব আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এনইআইআর চালুর আগের দিন পর্যন্ত নেটওয়ার্কে যেসব ফোন রয়েছে, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে; কোনো মোবাইল ফোন বন্ধ করা হবে না।

 

এই সিদ্ধান্তের পর বাজারে আনঅফিসিয়াল মোবাইল বিক্রি হঠাৎ বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেহেতু ১৬ ডিসেম্বরের আগে সচল হওয়া সব ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে; সেজন্য ক্রেতারা এখন আনঅফিসিয়াল ফোন কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

 

রাজধানীর একটি শপিং মলের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা অফিশিয়াল ও আনঅফিসিয়াল দুই ধরনের মোবাইলই বিক্রি করি। তবে আনঅফিসিয়ালের চাহিদাই বেশি থাকে সবসময়। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের পর হঠাৎ করেই বেচাকেনা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়েও বিক্রি করছেন।

 

আরও পড়ুন: বন্ধের মুখে অবৈধ ফোন! আপনার ফোনটি কি বৈধ, কীভাবে জানবেন

 

এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্রেতাদের মাঝে। কেউ বলছেন, এটি যৌক্তিক; আবার কারও মতে বাজারে চাপ বাড়বে এতে।

 

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর মোবাইল ফোন কিনতে আসা জোয়ার বলেন, যেহেতু আনঅফিসিয়াল মোবাইল বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছ, তাই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে কিনে রাখছি। না হয় পরে বেশি দাম দিয়ে মোবাইল কিনতে হবে।

 

অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাই আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধের সিদ্ধান্তে উদ্‌বিগ্ন। তারা মনে করছেন, নতুন এই সিদ্ধান্তে ফোন বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকলে আনঅফিশিয়াল ফোন কেনা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বাজারে ফোন কেনার খরচ বেড়ে যাবে।

 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, আমরা তো ব্র্যান্ডেড ফোন কিনি শখে আর আনঅফিসিয়ালে দাম কম বলে কিনি। অফিসিয়াল ফোন কিনতে গেলে বাড়তি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাগে, কোনো কোনো ফোনে আরও বেশি।

 

আরেক ক্রেতা রুবায়েত হোসেন বলেন,

আনঅফিশিয়াল ফোন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। এতে ফোন ছিনতাইয়ের প্রবণতা কমে আসবে। তবে এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সাধারণ মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর।

 

রাজধানীতে কয়েকজন মোবাইল ফোন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে যেসব আনঅফিসিয়াল ফোন আছে, তার বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীরা কেনেন।

 

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের মোবাইল ফোন বিক্রি করেন শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, 

আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধ হলে বিক্রি কমবে, কিন্তু অফিসিয়াল ফোনের দাম বেশি হওয়ায় সবাই কিনতে পারবে না। এতে বাজারে ক্রেতা‑বিক্রেতা উভয়ই অসন্তুষ্ট হবে।

 

ক্ষতির শঙ্কা করছে মোবাইল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনও। তাদের মতে, নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সভপাতি মোহাম্মদ আসলাম বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এর সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৫ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দুই লাখ কর্মীর জীবিকা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

 

তবে এই সিদ্ধান্তের ভালো দিকও দেখছেন অনেকে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পাশাপাশি মোবাইল সংশ্লিষ্ট অনেক উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান মনে করছে, নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে অবৈধ ফোনের ব্যবহার কমার পাশাপাশ কমবে চুরি-ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও। একই সঙ্গে রাজস্ব বাড়বে সরকারের।

 

মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সাব্বির হাসান বলে, আনঅফিসিয়াল ফোনগুলো মূলত শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লাগেজ পার্টি বা যাত্রীদের পকেটে করে দেশে প্রবেশ করে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এই প্রবণতা বন্ধ হবে।

 

আরও পড়ুন: সারা দেশে মোবাইল ফোন বিক্রির দোকান বন্ধ ঘোষণা

 

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, আনঅফিসিয়াল ফোনগুলো বিদেশে পুনর্বিক্রিত বা ক্লোন আইএমইআই ব্যবহার করা ডিভাইস, যা এখানে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে বিক্রি হয়। এগুলোর দাম কম হওয়ায় অনেক ক্রেতা অজান্তেই প্রতারিত হন। এতে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আর অবৈধ সিন্ডিকেট অঢেল মুনাফা করছে।

 

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এনইআইআর হলো একটি জাতীয় ডাটাবেজ, যেখানে দেশে ব্যবহৃত প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর নিবন্ধিত থাকে। এর মাধ্যমে বৈধ এবং অবৈধ (চোরাই, নকল বা কালোবাজারি) ফোনের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং গ্রাহক সুরক্ষায় মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন ব্যবস্থা বা এনইআইআর বাস্তবায়ন ‘সময়োপযোগী ও জরুরি পদক্ষেপ’। 

 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সম্প্রতি জানান, এনইআইআর এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত আইএমইআই নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ব্যবহৃত সিমের সঙ্গে যুক্ত করে নিবন্ধিত করবে। ফলে বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

 

এই ব্যবস্থা চালু হলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরও সুরক্ষিত হবে। পাশাপাশি, চুরি বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইস শনাক্ত ও ব্লক করা সম্ভব হবে, যার ফলে অপরাধ দমনেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এনইআইআর চালুর ফলে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) জালিয়াতি, সিম প্রতারণা ও স্ক্যাম কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে ইকেওয়াইসি যাচাই আরও শক্তিশালী হবে।

 

এদিকে, এই সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা তুলে ধরে দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকারীদের সংগঠন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) বলছে, দেশে বিক্রি হওয়া হ্যান্ডসেটের প্রায় ৬০ শতাংশই আনঅফিসিয়াল। এতে সরকার বছরে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। অবৈধ মোবাইলের দাপটে স্থানীয় শিল্প পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা সফলতার মুখ দেখবেন।

 

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র বলছে, নতুন এ ব্যবস্থায় শুধু অনুমোদিত, মানসম্মত ও বৈধভাবে আমদানি করা মুঠোফোন সংযুক্ত হতে পারবে। অবৈধ বা ক্লোন আইএমইআই (মুঠোফোন শনাক্তকরণ নম্বর) মুঠোফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারবে না। অর্থাৎ, এনইআইআর নামের নতুন এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে অনুমোদনহীন এবং অবৈধ উপায়ে আমদানিকৃত মোবাইল হ্যান্ডসেট সরিয়ে ফেলা। পাশাপাশি অনুমোদিত, মানসম্মত এবং বিদেশ থেকে বৈধভাবে আমদানি করা মুঠোফোনগুলোকে সঠিক ও বৈধ উপায়ে দেশের বিদ্যমান মোবাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ সময়োপযোগী হলেও সফল করতে হলে জনসচেতনতা জরুরি। ব্যবহারকারীদের সহজ ও নিরাপদ নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, বিক্রেতাদেরও সঠিক তথ্য দিতে হবে। অন্যথায়, সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধার পরিবর্তে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

 

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু যেমন জরুরি, তেমনি ফোনের দাম গ্রাহকদের নাগালের মধ্যেও রাখতে হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ দিতে হবে। বিদেশ থেকে ফোন আমদানিতে শুল্ক-ভ্যাট কমাতে হবে। না হলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

 

তবে নতুন এই সিদ্ধান্ত ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তাবায়ন সম্ভব না বলে মনে করেন তিনি। বলেন, অনেকেই এখন আনঅফিসিয়াল ফোন কিনে রাখছেন বা দেশে থাকা আনঅফিসিয়াল ফোনগুলো নেটওয়ার্কে সচল করে রাখছেন। এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন, সব মিলিয়ে এই সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

 

নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে ১৬ ডিসেম্বর থেকে যেকোনো মাধ্যম থেকে (বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন বিক্রয়কেন্দ্র, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) মুঠোফোন কেনার আগে অবশ্যই তার বৈধতা যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি মুঠোফোন কেনার রশিদ সংরক্ষণ করতে হবে। মুঠোফোন বৈধ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর ব্যবস্থায় নিবন্ধিত হয়ে যাবে।

 

অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোনের কী পার্থক্য?

 

অফিসিয়াল ফোন হলো যেগুলো ব্র্যান্ডের অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটর বা অথোরাইজড রিটেইলারদের মাধ্যমে বাজারে আসে। দেশে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অনুমোদিত ফোনগুলোকেই অফিসিয়াল ফোন বলা হয়। এই ফোনগুলোর আইএমইআই নম্বর বিটিআরসির ডাটাবেজে নিবন্ধিত থাকে এবং এগুলো বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় নির্বিঘ্নে কাজ করে।

 

আরও পড়ুন: দেশে প্রথমবারের মতো ট্রিপল-প্লে ও কোয়াড-প্লে নিয়ে আসছে বিটিসিএল

 

আর আনঅফিসিয়াল বা গ্রে মার্কেট ফোন হলো এমন ফোন, যেগুলো অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটরদের বাইরে অন্য মাধ্যম থেকে আমদানি করা হয়। এসব ফোনে সরকার নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করা হয় না ও কোনো অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি বা সেবা নিশ্চয়তা থাকে না।

 

মুঠোফোনের বৈধতা যাচাই করার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। গ্রাহক কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে সহজেই তা জেনে নিতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক-

 

ধাপ-১:  মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD লিখে স্পেস দিয়ে ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি টাইপ করতে হবে। উদাহরণ- KYD 123456789012345

 

ধাপ-২: এবারে মেসেজটি ১৬০০২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

 

ধাপ-৩: ফিরতি মেসেজে গ্রাহক তার মুঠোফোনের বৈধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

 

বর্তমানে ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বৈধ কি না যাচাই করবেন যেভাবে

 

এসএমএসের মাধ্যমে যাচাই পদ্ধতি

 

ধাপ-১: প্রথমে মোবাইলের কিপ্যাডে *#06# ডায়াল করুন। স্ক্রিনে দেখা যাবে ফোনের আইএমইআই নম্বর।

 

ধাপ-২: মোবাইল ফোন থেকে *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করুন।

 

ধাপ-৩: অটোমেটিক বক্স এলে হ্যান্ডসেট-এর ১৫ ডিজিটের আইএমইআই (IMEI) নম্বরটি লিখে প্রেরণ করুন।

 

ধাপ-৪: ফিরতি মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের/হ্যান্ডসেটের হালনাগাদ অবস্থা জানানো হবে।

 

অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে যাচাই পদ্ধতি

 

বিটিআরসির ওয়েবসাইটে ‘Verify IMEI’ অপশনে গিয়ে আইএমইআই (IMEI) নম্বরটি লিখুন। সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল দেখা যাবে–আপনার ফোনটি ‘Valid’, ‘Invalid’ নাকি ‘Clone’।

 

বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া মুঠোফোনের নিবন্ধন

 

বিদেশ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে কেনা বা উপহার পাওয়া একটি মুঠোফোন প্রাথমিকভাবে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে সচল হবে। তবে পরবর্তীতে এই ফোনগুলোকে অবশ্যই নিবন্ধন করে নিতে হবে।

 

প্রাথমিকভাবে সচল হওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য দাখিলের জন্য গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হবে। এরপর গ্রাহকের দাখিল করা সব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর শুধু বৈধ ফোনগুলোই নেটওয়ার্কে সচল থাকবে।

 

বিদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আনা ফোনের অনলাইন নিবন্ধন করবেন যেভাবে

 

ধাপ-১: গ্রাহককে প্রথমেই এনইআইআর পোর্টালে (neir.btrc.gov.bd) যেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে।

 

ধাপ-২: পোর্টালের স্পেশাল রেজিস্ট্রেশন (Special Registration) সেকশনে গিয়ে মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বর দিতে হবে।

 

ধাপ-৩: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ছবি বা স্ক্যান কপি যেমন- পাসপোর্টের ভিসা/ইমিগ্রেশন, ফোনটি ক্রয়ের রশিদ ইত্যাদি আপলোড করে সাবমিট বাটনে চাপ দিতে (প্রেস করতে) হবে।

 

ধাপ-৪: হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। তবে বৈধ না হলে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয়া হবে এবং ফোনটিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

 

আরও পড়ুন: এনইআইআর চালুর আগে স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন পাবে বৈধ-অবৈধ সব ফোন!

 

উল্লেখ্য, ব্যক্তিপর্যায়ে বিদেশ থেকে ফোন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস (আমদানি বিধিমালা) অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশের নেটওয়ার্কে আগে ব্যবহৃত নিজের ব্যক্তিগত একটি ফোন বাদে সর্বোচ্চ আর একটি মুঠোফোন বিনা শুল্কে দেশে আনতে পারবেন। আর শুল্ক দেয়া সাপেক্ষে আরও একটি অতিরিক্ত ফোন নিয়ে আসতে পারবেন।

 

ফোন বিক্রি করতে চাইলে কী করবেন?

 

নিবন্ধিত মুঠোফোন গ্রাহক যদি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে চাস সেক্ষেত্রে আগে হ্যান্ডসেটটিকে ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করতে হবে। ডি-রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে নিবন্ধিত একটি সিম ফোনে থাকতে হবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের শেষ চার ডিজিট উল্লেখ করতে হবে। নিবন্ধিত ফোন বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে। ডি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে চারটি মাধ্যমে।

 

নিবন্ধিত মুঠোফোন ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করার উপায়

 

১) সিটিজেন পোর্টাল (neir.btrc.gov.bd)

 

২) মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) পোর্টাল

 

৩) মোবাইল অ্যাপস

 

৪) ইউএসএসডি চ্যানেল (*১৬১৬১#)

 

তবে ডি-রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে গ্রাহক তার ফোনে যে সিমটি ব্যবহার করছেন তা অবশ্যই নিজের এনআইডি দিয়ে নিবন্ধিত হতে হবে। ক্লোন বা ডুপ্লিকেট আইএমইআই নম্বর যুক্ত হ্যান্ডসেট ডি-রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তথ্য হিসেবে পরবর্তী ব্যবহারকারীর সিম নম্বর দিতে হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন