আদমদীঘিতে মাছের রেণুতে বিপ্লব, বছরে আয় ৪০০ কোটি টাকা

৪ সপ্তাহ আগে
রেণু পোনা উৎপাদন ও মাছ চাষের মাধ্যমে মাত্র তিন দশকে বগুড়ার আদমদিঘিতে এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে। মান ভালো হওয়ায় রেণু ও পোনার চাহিদা দেশজুড়ে। চাষিদের হিসাবে, শুধু পাঙাশ মাছের রেণু বিক্রি করে এ উপজেলা বছরে অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার উপরে আয় করে। অন্যান্য রেণুর হিসাব যোগ করলে এই হিসাব ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখন মাছের খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ায় চাষিরা অস্বস্তিতে রয়েছেন।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা। মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনে দেশের মধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। আদমদীঘি উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য মতে, এ উপজেলায় সরকারি বেসরকারি মিলে মোট ১ হাজার ২৫৭ দশমিক ৮৭ হেক্টরের ৬ হাজার ৪৭২টি জলাশয় রয়েছে। সরকার নিবন্ধিত মোট ৬০টি হ্যাচারি রয়েছে। এর বাহিরে সরকারি হ্যাচারিকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র বলা হয়ে থাকে।

 

এ সব হ্যাচারিতে পাবদা, ট্যাংরা, শিং, পাঙাশ, গুলসাসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণু উৎপাদন করা হয়। চলতি বছরে সব মিলে উপজেলায় চাষিদের মাধ্যমে মোট ৪৪ হাজার ২৪৭ কেজি রেণু উৎপাদন হয়। গড়ে ৪ হাজার টাকা কেজি ধরে প্রতি রেণু বিক্রি হয়।

 

আরও পড়ুন: অর্ধকোটি টাকার জব্দকৃত চিংড়ি রেণু অবমুক্ত

 

যদিও চাষিরা বলছেন, কোনো সংকট না থাকলে আদমদীঘি থেকে প্রতিদিন অন্তত ১ কোটি টাকার শুধু পাঙাস মাছের রেণুই বিক্রি হয়। অন্যান্য মাছের রেণুর বিক্রির হিসাব কষলে এই পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকার উপরে হবে।

 

জেলা মৎস্য কার্যালয় বলছে, এর বাহিরে এই উপজেলায় অন্তত ১০ কোটি টাকার মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়। বড় মাছ উৎপাদন হয় সাড়ে ১৯ হাজার মেট্রিক টনের উপরে। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ১৮৯ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়।

 

আদমদীঘিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সস্টিটিউট (প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র) বলছে, গত অর্থ বছরে দেশে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন পাঙাশ মাছ উৎপাদন হয়েছে। মাটির গুণাগুণের কারণে পাঙাস মাছের রেণু আদমদীঘিতে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। সরকারি নথিতে দেশে প্রায় ৫০ হাজার কেজি পাঙাশের রেণু উৎপাদন করা হয়, তার ৯০ ভাগের বেশি এখানে উৎপাদিত হয় আদমদীঘিতে। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে।

 

সরকারি হিসাবে না থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আদমদীঘি উপজেলায় পাঙাশের রেণু আরও অনেক বেশি উৎপাদন করা হয়। এই হিসাব সরকারি নথিতে না আসার কারণ অনেক কৃষক হিসাব দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

 

মাছ চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই উপজেলায় অন্তত এক লাখ মানুষ জড়িত। মাছ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে উপজেলার পাশেই মোকাম গড়ে তোলা হয়েছে। মোকাম কিংবা চাষিদের কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক সমিতিও। তবে সরকারিভাবে চাষিদের নিয়ে উপজেলায়  মৎস্য উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। সাড়ে ৭০০ সদস্যের এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কোরবান আলী।

 

এ উপজেলায় মাছের রেণু ব্যবসার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে কোরবান আলী বলেন, পাঙাশ মাছের রেণুর জন্য দেশের মধ্যে আদমদীঘি বিখ্যাত। এখান থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি পাঙাস মাছের রেণু ভারতে পাঠানো হয়। এ হিসাবে বছরে এই উপজেলা থেকে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার পাঙাস মাছের রেণু বিক্রি হয়। এর বাহিরে অন্তত ৭০ কোটি টাকার রেণু বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। উপজেলার রেণুর ব্যাপক সুনাম রয়েছে। করোনাকালে ব্যবসায়িকভাবে কিছুটা সংকট থাকলেও আগামীতে এই পরিস্থিরি অবসান ঘটবে।

 

আরও পড়ুন: ঘেরে ভেসে উঠছে মৃত চিংড়ি, বিপর্যয়ের মুখে সাতক্ষীরার চাষিরা

 

তবে এখন রেণু উৎপাদনে করে অনেক সংকটে রয়েছেন বলে জানান বেলাল সর্দার নামের এক চাষি। ২০ বছর ধরে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি। বেলাল জানান, আগে বগুড়ার আদমদীঘি থেকে প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ গাড়ি করে মাছের রেণু বিক্রি হতো। ভারতে কোটি কোটি টাকার রেণু বিক্রি করা হয়েছে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভারতে রেণু বিক্রি করতে পারছি না।

 

জিয়াউল হক পুটুকে আদমদীঘি এলাকায় পাঙাস মাছের রেণু উৎপাদনের পাইওনিয়ার বলা হয়। তিনি বলেন, ভারতে পাঙাস মাছের রেণুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বৈধপথে পাঠানো সুযোগ কম। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার, যেন ভারতে বৈধভাবে রেণু রফতানি করা যায়। তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সুফল পাবে। আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানেরও জায়গা তৈরি হবে।

 

দেশীয় মাছসহ পাঙাস মাছের রেণু উৎপাদনে আদমদীঘি উপজেলা প্রসিদ্ধ উল্লেখ করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালি পদ রায় বলেন, এখানে মাছ চাষের সঙ্গে অন্তত ২০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের পুষ্টির জোগানে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করছেন তারা। মাছ চাষের সঙ্গে জড়িতদের সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন