আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির মর্যাদা

৩ সপ্তাহ আগে
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় উত্তরা ও টঙ্গীর আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে কান্নায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে। দগ্ধ ও আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন অনেকে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারি, আর বার্ন ইনস্টিটিউটের চারপাশজুড়ে ভিড় আর শোক।

ঠিক এর আগেও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুনের ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন অনেক মানুষ, আহত হয়েছিলেন কয়েক শতাধিক। দুটি ঘটনাই পুরো জাতিকে গভীর শোকের সাগরে ভাসিয়েছে।

 

এমন হৃদয়বিদারক মৃত্যু কারও জন্যই সহজে মেনে নেওয়ার নয়। তবে ইসলামে এমন মৃত্যুর একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ এসব ধরণের দুর্ঘটনায় নিহতদের ‘শহীদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

 

আরও পড়ুন: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৯

 

হাদিসে এসেছে আগুনে ও দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তি শহীদ। সুনান আবু দাউদ (হাদিস: ৩১১১) ও ইবনে মাজাহ (হাদিস: ২৮০৩) গ্রন্থে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, রসুলুল্লাহ সা. বলেন,

 

আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তি শহীদ,
পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ,
আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ,
পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ,
কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ,
নিউমোনিয়া জাতীয় কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ,
এবং যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায়, সেও শহীদ।

 

এই হাদিসের প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, বরং যেসব মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বা শারীরিক যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেন, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ মর্যাদা—শহীদের মর্যাদা।

 

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে যেসব মুসলমান ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, আমরা আশাবাদী—আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করবেন। তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য এটি হতে পারে ধৈর্যের সহায়ক ও অন্তরের সান্ত্বনা।

 

বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, তার বাবা জাবের রা:-কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন রসুলুল্লাহ (সা.)। তখন সেখানে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।


মহানবী সা. তাদের থামিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে’।

 

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা দেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়া জাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ।  (আবু দাউদ: ৩১১১)

 

আল্লাহ তাআলা বিমান দুর্ঘটনা ও আগুনে নিহত সকল মুসলিম ভাই-বোনকে শহীদের মর্যাদা দান করুন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন এবং উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন