আগরতলা থেকে সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে সময় সংবাদকে হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তিনি জানান, ‘ত্রিপুরেশ্বরী সনাতন মঞ্চ’ নামের একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সমর্থকরা দুপুরে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায়। সেখানে তারা ভাঙচুর চালায়। এছাড়া বাংলাদেশ মিশনে টাঙানো একটি পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতন ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরেই ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’র ব্যানারে আগরতলা ও এর আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিল হচ্ছিল। সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকা হয়। আগরতলার সার্কিট হাউসে অবস্থিত গান্ধী মূর্তির সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। দুপুরে বিক্ষোভকারীরা হঠাৎ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে।
সেখানে গিয়ে তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ভবনের সামনে থাকা সাইনবোর্ড ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এই ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ভাঙচুরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।’
আরও পড়ুন: আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা, ভারতের প্রতিক্রিয়া
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তিকে কোনো অবস্থাতেই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি ও সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভ করতে গিয়ে সহিংস হয়ে ওঠে ‘বঙ্গিও হিন্দু জাগরণ’ নামে একটি হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা। ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় ঢাকা। ওই ঘটনার পরদিন শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করেছে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে বঙ্গিও হিন্দু জাগরণ নামে একটি হিন্দু সংগঠন সহিংস বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীদের একটি বৃহৎ দলের আয়োজিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় পৌঁছায়। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন দেয় এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হলেও ডেপুটি হাইকমিশনের সব সদস্যের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে বৃহস্পতিবার যা ঘটেছিল
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর জঘন্য কাজটির তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ সরকার। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ সরকার।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার যেকোনো ধরনের সহিংস কার্যকলাপের নিন্দা করে এবং কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন এবং ভারতে বাংলাদেশের অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের পাশাপাশি এর কূটনীতিক এবং অ-কূটনৈতিক সদস্যদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করে।
তবে, বাংলাদেশ সরকারের এই অনুরোধের পরও দেশটিতে ফের বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুর এবং পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটল।
]]>