হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে বকরি জবেহ করেছেন। (আবু দাউদ)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, দুটি বকরি জবেহ করেছেন। খায়সামি (রহ.) বলেন, হজরত আনাসের বর্ণনা শুদ্ধতার বিচারে বুখারি-মুসলিমের বর্ণনার সমমর্যাদা রাখে। ইমাম মালেক (রহ.) তার মুআত্তায় বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার সন্তান হয় সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা করতে চায়, তবে তা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা করো, নাম রাখো ও চুল কর্তন করো। (তিরমিজি)
আকিকার গোশতের বিধান
আকিকার গোশত শিশুর মা-বাবাসহ সবাই খেতে পারবেন। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। অর্থাৎ পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া যাবে না। এর চামড়া বা মাংস বিক্রি করা যাবে না বরং এর গোশত খাবেন, সদকা করবেন ও যাকে ইচ্ছে উপহার হিসেবে দেবেন।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, আকিকার গোশত নিজে খাবেন, অন্যকে খাওয়াবেন এবং কিছু সদকা করবেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ৭৬৬৯)
আকিকার গোশত রান্না করে খাওয়ানো নাকি হাদিয়া দেয়া উত্তম?
আকিকার গোশত রান্না করে খাওয়ানো যায়। আবার গোশত হাদিয়াও দেয়া যায়। তবে সাধারণ অবস্থায় গোশত হাদিয়া দেয়ার চেয়ে রান্না করে খাওয়ানো উত্তম। হজরত আয়েশা (রা.) আকিকার গোশতের বর্ণনা করে বলেন,
تُجْعَلُ جُدُولاً، فَيُطْبَخُ، فَيَأْكُلُ وَيُطْعِمُ অর্থ: টুকরো টুকরো করে কেটে রান্না করে নিজে খাবে এবং খাওয়াবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৪৭৪৪)
ইমাম নববি (রহ.) বলেন,
قال جمهور أصحابنا يستحب أن لا يتصدق بلحمها نيا بل يطبخه অর্থ: মোস্তাহাব হলো আকিকার গোশত কাঁচা সদকা করবে না; বরং তা রান্না করে খাওয়াবে। (আল মাজমু: ৮/৪১০)
খেয়াল রাখতে হবে, ইদানীং বিভিন্ন দাওয়াতের অনুষ্ঠানের মতো আকিকার দাওয়াতেও নারী-পুরুষের একসঙ্গে খাওয়া, একই স্থানে বসা এবং উপঢৌকন দেয়া-নেয়ার আড়ম্ভরপূর্ণ আয়োজন করা হয়। এটিকে আবার জরুরিও বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ইসলামি শরিয়তে এসব নিষিদ্ধ। তাই দাওয়াত করে আকিকার গোশত খাওয়াতে চাইলে ইসলামি শরিয়তের নীতিমালা অনুযায়ী করতে হবে। (তানকিহুল ফতোয়াল হামিদিয়্যা: ২/২৩৩; ইলাউস সুনান: ১৭/১২০)
আকিকা কবে করবেন?
সন্তান জন্ম নেয়ার সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম। তবে সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারলে ১৪তম দিন বা ২১তম দিন আকিকা করা সুন্নত।
হজরত বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সপ্তম দিন অথবা চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিন আকিকা কর। (তিরমিজি)
আরও পড়ুন: শরিকে কোরবানি দিলে কেউ টাকা কম দিলে জায়েজ হবে?
আকিকায় কয়টি পশু কোরবানি করবেন?
ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ছেলের পক্ষ থেকে প্রতিদান হিসেবে দুটি বকরি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত।
]]>