অস্ট্রেলিয়ায় ইতিহাস গড়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন অ্যান্থনি আলবানিজ। দেশটির নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ১৫০ আসনের মধ্যে লিবারেল পার্টি অন্তত ৮৬টি আসন পেতে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়, ট্রাম্প-ঘেঁষা কট্টর রাজনীতি এবং স্বাস্থ্যখাতে সঙ্কট সব মিলিয়ে ভোটারদের রায় গেছে স্থিতিশীলতার পক্ষে।
শনিবার (৩ মে) সিডনির লেবার পার্টির সদর দফতরে সমর্থকদের উল্লাসের মাঝে বিজয়ের ঘোষণা দেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। জানিয়ে দেন, এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরও বেড়ে লেবার পার্টি ফের ক্ষমতায় আসছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আলবানিজ হলেন গত দুই দশকে প্রথম অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দুই মেয়াদে জয় পেলেন।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির জয়
অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তার এই সময়ে, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা প্রত্যাশা ও সংকল্প বেছে নিয়েছে। ন্যায়ের প্রতি বিশ্বাস ও একে অপরের প্রতি আস্থা নিয়ে আমরা আবার অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে ফিরছি।’
অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ নির্বাচনে পিটার ডাটনের পরাজয়ে এরমধ্যেই, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর পেছনের কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর গবেষণা। শুধু প্রধানমন্ত্রীর গদি নয়, নিজের দীর্ঘদিনের আসন ডিকসনও খুইয়েছেন তিনি। বিপরীতে, অ্যান্থনি আলবানিজ চমক দেখিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরেছেন ক্ষমতায়।
বিপরীতে পিটার ডাটনের পতন ছিল নাটকীয়। ২৪ বছর ধরে ধরে রাখা নিজের আসন ডিকসনও এবার খুঁইয়েছেন। ব্রিসবেনের এই আসনে লেবার প্রার্থী আলী ফ্রান্স প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে ডাটনকে পরাজয়ের পথে, যেখানে ডাটন ২২ বছর ধরে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। পরাজয়ের ভাষণে তিনি দুঃখপ্রকাশ করে দায় স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় আমরা যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি। আর নির্বাচনের ফলাফলই তা জানান দিচ্ছে এবং এর সম্পূর্ণ দায় আমি স্বীকার করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে তার সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি।’
ডাটনের এই পরাজয়ের পেছনে তার সঙ্গে ট্রাম্পের চিন্তাধারার সাদৃশ্যকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তার কট্টরপন্থি অবস্থান, অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা, আর চীনের প্রতি বিরূপ মনোভাব-সবকিছুতেই মিল পাওয়া যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে।
যদিও ডাটন এই তুলনা অস্বীকার করেছেন। তবে, লিবারেলদের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের প্রভাব ফুটে উঠতে দেখা যায় বলে জানায় গণমাধ্যম। কেবল নীতি নয়, দলীয় অবস্থানেও ছিল মার্কিন রিপাবলিকানদের ছায়া। জোট সরকারের তরফে ‘গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত করা হয় জাসিন্তা নাম্পিজিনপা প্রাইসকে। যিনি প্রকাশ্যে এমএজিএ টুপি পরে ছবি তোলেন-যা অস্ট্রেলীয় রাজনীতিতে বিরল এক দৃষ্টান্ত।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প কখনোই আমাদের ভাঙতে পারবেন না, বিজয় ভাষণে কানাডার প্রধানমন্ত্রী
এছাড়াও, ডাটনের প্রতিশ্রুতি ছিল ৪০ হাজার সরকারি চাকরি কমানো। যা শুনে অনেকেই স্মরণ করেন ইলন মাস্কের ডিওজিইর কথা। এরপর যদিও জনরোষে পড়ে তিনি নিজেই সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন।
ট্রাম্পের মতোই ডাটনও কর ছাড়, প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো, স্বাস্থ্য খাতে বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের মতো বিপুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রচারণার সময়। আবার একই সঙ্গে বলেছেন সরকারি ব্যয় কমানোর কথা। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বার্তা ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপ আর বেপরোয়া নীতিমালা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তেমনি ডাটনের কথিত ট্রাম্প-ঘেঁষা অর্থনীতি নিয়ে অস্ট্রেলীয়দের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক আর বাণিজ্য যুদ্ধ বিষয়ে ডাটন স্পষ্ট কোনো মতামত দিতে পারেননি। এ অবস্থায়, ডাটনের এই পরাজয়কে অনেকেই দেখছেন ট্রাম্পীয় রাজনীতির হার হিসেবে।