অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, সন্ধ্যায় ভুতুড়ে পরিবেশ

১ সপ্তাহে আগে
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। নিয়মিত পৌর করের বোঝা বাড়লেও খানাখন্দে ভরা অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো; অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও। সন্ধ্যায় নেমে আসে ভুতুড়ে পরিবেশ। সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্না দিয়েও হতাশ পৌরবাসী।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এরই মধ্যে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভা। প্রায় এক লাখ জনঅধ্যুষিত রামগঞ্জ পৌরসভাটি ২০০৪ সালে প্রথম শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু পৌরবাসীর ঘাড়ে নিয়মিত করের বোঝা চাপলেও, সে তুলনায় বাড়েনি কোনো নাগরিক সুবিধা। উল্টো প্রতিনিয়তই করের বোঝা বাড়ছে পৌরবাসীর ঘাড়ে। এতে করে ক্ষুব্ধ ও হতাশ পৌর বাসিন্দারা।


স্থানীয়রা জানান, প্রথম শ্রেণির হলেও এ পৌরসভার অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ সড়কের এখন বেহালদশা। এসব সড়কের ইটের খোয়া উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। নিদিষ্ট কোনো ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ফেলানো হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে করে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।


আরও পড়ুন: চাহিদার চারভাগের একভাগ পানিও পাচ্ছেন না গোপালগঞ্জ পৌরবাসী


পৌরবাসীর অভিযোগ, নিয়মিত পৌর কর প্রদান করা হলেও ‘এই পৌরসভায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রয়েছে বিদ্যুতের ভোগান্তি, নেই সড়কে ল্যাম্প পোস্ট। কিছু কিছু জায়গায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ এলাকায় নেই সুপেয় পানি।’


পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাগরিকা চৌধুরী বলেন, ‘নামেই আমরা পৌরসভায় বাস করি। পুরো পৌর এলাকাজুড়ে রাস্তা-ঘাটের এখন বেহালদশা। নেই সড়কে বাতির ব্যবস্থাও। সন্ধ্যা নামলেই যেন তৈরি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ। রাতের বেলায় রাস্তা-ঘাটে চলাচলে নানা সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।’


এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সামিয়া আফরোজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিয়মিত পৌর কর প্রদান করলেও কোনো নাগরিক সুবিধা পাই না। সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা, নেই সুপেয় পানি। অবস্থা দেখে মনে হয়, আমরা পৌরসভায় নয়; যেন গৌরসভায় বসবাস করি।’


আরও পড়ুন: সড়ক নয় যেন খণ্ড খণ্ড জলাশয়


পৌরসভার টামটা এলাকার বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ শামছুল আলম বলেন, ‘আমরা পৌর এলাকায় বাস করি, কিন্তু আমাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে যায়, তখন পায়ে হেঁটে যাওয়ার কোনো উপায় থাকে না।’


তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিয়মিত পৌর ট্যাক্স দিচ্ছি কিন্তু পৌরসভা থেকে কোনো রকম নাগরিক সুবিধাই পাচ্ছি না। না পাই সুপেয় পানি, না পাই বিদ্যুৎ। রাস্তা-ঘাটেরও বেহালদশা। এখনতো মনে হচ্ছে পৌরসভার বাহিরে যারা বসবাস করেন, তারা আমাদের চেয়েও অনেক ভালো আছেন।’


পৌর শহরে চলাচলকারী একাধিক অটোরিকশা চালক জানান, শহরের বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশার কারণে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয় তাদের। মাঝেমাঝেই রিকশার যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। যাত্রীরাও অনেক সময় রিকশায় উঠতে চান না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাদের।


আরও পড়ুন: সাভারে বৃষ্টিতে পৌর এলাকার সড়কে হাঁটু পানি


এ দিকে পৌরবাসীর বেহালদশার কথা স্বীকার করে রামগঞ্জ পৌরসভার নবনিযুক্ত প্রশাসক ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ জানান, ইতোমধ্যে সড়ক সংস্কারে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া নাগরিক সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করছেন তারা। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৌরবাসীর প্রতি নিয়মিত পৌরকর প্রদানে আহবান জানান ওই প্রশাসক।


২১ বছর আগে রামগঞ্জ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসাবে রূপান্তরিত হলেও এখনও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সুবিধা। পৌরসভাটির ১৬৩ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থার মধ্যে অধিকাংশ সড়কেরই এখন বেহালদশা। সড়ক সংস্কারসহ নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিতে পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে চরম দুর্ভোগে পড়বেন বাসিন্দারা, এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন