ফরিদপুর শহরের আরোগ্য সদন প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে । নিহত লামিয়া ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের এমপি ডাঙ্গি গ্রামের বাবুল সিকদারের মেয়ে। মাত্র ছয় মাস আগে তার বিয়ে হয়েছিল একই এলাকার মোশাররফ খানের ছেলে হিমেল খানের (২৫) সঙ্গে। স্বামী হিমেল বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যেই তার ফ্লাইট ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে লামিয়াকে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুর শহরের আরোগ্য সদন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং গলব্লাডারে পাথর রয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন প্রয়োজন। শনিবার বিকেলে অপারেশন সম্পন্ন হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী অপারেশনটি করেন সার্জন ডা. রতন সাহা।
তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশনের জন্য প্রতিশ্রুত চিকিৎসক ডা. রতন সাহা নিজে না করে অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে অপারেশন করান। এ ঘটনাকেই তারা লামিয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অপারেশনের পর বিকেলে রোগীর অবস্থা ভালো আছে বলে জানানো হলেও রাত ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়, লামিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। পরে ফরিদপুর হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আইসিইউতে নেয়া হলে রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল চত্বরে লামিয়ার মায়ের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, 'আমার বুকের কষ্ট দেখার কেউ নেই। আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও!'
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ, ২ চিকিৎসক আটক
এ বিষয়ে আরোগ্য সদন প্রাইভেট হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আ. স. ম. জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটো বলেন, অপারেশন ডা. রতন সাহাই করেছেন। অপারেশনে কোনো ভুল হয়নি বা চিকিৎসকের অবহেলা ছিল না। মূলত অ্যানেসথেশিয়া করার কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা গেছে লামিয়া। রোগীকে অপারেশন করতে হলে অজ্ঞান করতে হবেই, সকলের শারিরীক অবস্থা এক হয় না। লাখে একজন রোগীর এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এ কারণে আমরা দুঃখিত।
তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি রোগীর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। রাতেই হার্ট ফাউন্ডেশনের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিলনা।
সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। জানা মাত্রই তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্তেই মূল ঘটনা বের হয়ে আসবে। দোষী হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।