রাজধানীর সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের সংযোগকারী আধুনিক সড়ক তিনশ ফিট। হাইস্পিডের এই সড়কে একের পর এক ছিনতাই-ডাকাতি ও সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আতঙ্কের এক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি পূর্বাচলে ছিনতাইয়ের শিকার দুই ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাজ শেষে পূর্বাচল সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। ফেরার পথে কাঞ্চন ব্রিজের আগে তার মোটরসাইকেলটি গতিরোধ করে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে পিঠে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। তিনি বলেন, ১০ থেকে ১২ জন লোক মোটরসাইকেল থেকে ফেলে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। সঙ্গে থাকা প্রায় ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। যারা এই কাজটি করেছে, তারা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।
আরও পড়ুন: কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়েই পালানোর চেষ্টা, অটোরিকশার ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে যা জানা গেল
এদিকে দিনদুপুরে পূর্বাচল সেক্টর এলাকায় বাইকে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে জীবন নিয়ে ফিরলেও সঙ্গে থাকা সব হারান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, একজন মানুষ মাথায় ডালা করে সবজি নিয়ে যাচ্ছিলেন। ডালার নিচে ছিল ধারালো একটি দাঁ। হঠাৎ করেই সেই দাঁ তাক করে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী।
এসব ঘটনার পর শুধু রাত নয় এখন দিনেও এই সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তিনশো ফিট সড়ক ধরে নীলা মার্কেটের নিচের সড়ক একশ ফিটের রাস্তা ধরে যতটা সামনে এগোনো যায় পুরো রাস্তা অন্ধকার আর জনমানবশূন্য। স্থানীয় দোকানদার ও ঘুরতে আসা অনেকেই জানান, এলাকায় একদমই নিরাপত্তা নেই। সন্ধ্যা নামলেই আশপাশ ফাঁকা হয়ে যায়। তখনই মোটরসাইকেলে করে এসে ছিনতাইকারীরা হানা দেয়। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে প্রতিটি মানুষ। কেউ রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও আতঙ্কে থাকেন কখন যে ছিনতাইকারীরা এসে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়।
গাড়িচালকরাও জানালেন একই অভিজ্ঞতা। তারা বলেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যাত্রী নিয়ে এই রাস্তায় চলাচল করতে হয় আতঙ্ক নিয়ে। কখন কোথা থেকে কীভাবে ছিনতাইকারী এসে চাকু বা অস্ত্র ঠেকাবে, তা বলা মুশকিল। রাত হলেই ভয় বাড়ে, নিরাপত্তাহীনতা যেন ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
দ্রুত গতির মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার রেসিং আর ইউলুপগুলোতে দর্শনার্থীদের রাস্তা পারাপারে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণও হারাচ্ছেন অনেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই এমনকি হত্যার মত ঘটনা ঘটছে সড়কটিতে। যাত্রীরা জানান, ডাকাতেরা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে হঠাৎই পথরোধ করে। এরপর পিস্তল বা চাকু দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। অনেক সময় মানুষের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও নিয়ে যায়। এসব ঘটনা বেশি ঘটছে জনশূন্য ও নিরিবিলি এলাকায়, যেখানে আশপাশে সাহায্যের কেউ থাকেন না। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় চলাফেরা করাই এখন আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে ১২০ কিমি গতিতে পালালেন বাইকার
পুলিশের নথি বলছে, গত এক বছরে সড়কটিতে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ২৭টি। পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে ৩০০ ফুট সড়কে দুর্ঘটনায় প্রায় ৭৪ জন আর ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার শিকার হয়ে ২১ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
সময় সংবাদের হাতে আসে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে নিলা মার্কেট পর্যন্ত ছিনতাইয়ের বা ডাকাতির ঘটনায় সক্রিয় ছিনতাইকারীদের একটি চক্রের সদস্যদের নাম। বেশিরভাগই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। নারায়ণগঞ্জ সার্কেল-গ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘উঠতি বয়সের ছেলেপেলেরা এ ধরনের কাজগুলো করে থাকে। বিশেষ করে রাতের বেলা এগুলো বেশি ঘটে। অপরাধ দমনে আমরা চেষ্টা করছি, চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। তারপরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। এজন্য জনমানবশূন্য এলাকাগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’
দিনে রাতে টহল টিম বৃদ্ধির পাশাপাশি পুরো এলাকাটি সিসি টিভির আওতায় আনার দাবি করছেন স্থানীয়রা।
]]>