ব্যাংকের হৃদ্পিণ্ড সচল রাখেন আমানতকারীরা। অথচ, প্রতিদিনই ব্যাংক থেকে অপমান আর অসহায়ত্ব নিয়ে ফিরে যেতে হয় আমানতকারীদের। একজন আরেকজনের তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হন।
সময় সংবাদের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন আমানতকারীর। তারা জানান, অনেক গ্রাহক কান্না করে ব্যাংক থেকে ফিরে যান। অনেকেই মেয়ের বিয়ে দেবে তার জন্য একটা আমানত রাখছে, সেই আমানতটাও তারা পাননি।
একজন গ্রাহক বলেন, ব্যাংক থেকে একবার দিয়েছে ৫ হাজার টাকা, আবার দিয়েছে ৩ হাজার। আর টাকা দেয় না। কাউন্টারেই লোক থাকে না।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অংশ জুড়ে যখন অংকটি বড় হয় তখন একজন ব্যক্তি উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু, মন্দঋণের ফাঁদে থাকা ব্যাংকগুলোর তিক্ত অভিজ্ঞতা বাঁধসাধে আমানতকারীদের আগ্রহে। ফলে, ব্যাংকের টেবিলে থমকে যায় তাদের স্বপ্ন।
আরও পড়ুন: চার ব্যাংক থেকেই অর্থ লোপাট করে এস আলম গ্রুপ: দুদক
এ বিষয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা ইমরুল কায়েসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ না পাওয়ার কারণে আমি আসলে কাজগুলো ধরতে পারছি না। ছোট ছোট কাজ যেগুলো সাব কন্ট্রাক্টে নিতে হয়, ফরেন কোম্পানি অথবা ক্লায়েন্টের কাছ থেকে সেগুলোর মধ্যে থেকে ২টা কাজ আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমি চাচ্ছি যে লোনটা যদি দ্রুত অনুমোদন করা হতো তাহলে আমি হয়তো টাকাটা তুলে কাজে লাগাতে পারতাম।
বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ খেলাপিতে ব্যাংকপাড়া ডোবার অভিজ্ঞতাতেও ব্যাংকগুলোর সম্ভিত ফেরেনি, পরিবর্তন আসেনি পুরোনো চার্চায়, বলে জানান এসএমই উদ্যোক্তারাও।
কেপিআই কনসালটেন্টের সিইও মো. ইফতেখার রহমান বলেন, ওই সব ব্যাংকে তো আমি পাচ্ছিই না। তখন অন্য ব্যাংকে চাপ বাড়ছে। এখানকার কাস্টমার সেখানে যাওয়াতে চাপ বাড়ছে। তার তো একটা লিমিটেশন আছে। ওই ১৫টা ব্যাংকের কাস্টমার যখন অন্য ব্যাংকে যাচ্ছে তখন চাপ বাড়ছে। এসএমই সেক্টরে এক কোটি টাকার ভেতরে লোন পেতে সমস্যা হয়। ফান্ডের কারণে অনেকেই কাজ করতে পারছে না।
আরও পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য হতে পারবেন যারা
অন্যদিকে দুর্বল ব্যাংকগুলোর চাপ এখন পুরো আর্থিক খাতজুড়ে। ৬০ ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ২০-২৫টির পরিস্থিতি ভালো। দেউলিয়ার পথে ১২ ব্যাংক, আর ঝুঁকিতে ১৫টি। আর্থিকখাত বিশ্লেষকরা বলছেন, আমানতকারীদের সম্পদ ফেরাতে খেলাপি পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিতে হবে ব্যাংকগুলোকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল আমিন বলেন, দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ দেয়া যাবে না। ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মতো ধরে দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যাংক মার্জারে পুরোপুরি বাস্তবায়নে সময় লাগবে দুই বছর। ততদিন কি আমানতকরীদের আরও অপেক্ষা করতে হবে? ভোগান্তি কতদিনে শেষ হবে এমন প্রশ্নে, আমানতকারীদের আমানত রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একমাত্র হাতিয়ার- ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫, বলছে অভিভাবক প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, যেহেতু ব্যাংকের মালিকানা সাময়িকভাবে সরকারের হাতে চলে আসবে, অতএব সরকারের ওপর জনগণ যেন আস্থা রাখে। আস্থা থাকলে যে আমানতকারীর টাকা উত্তোলন অত্যাবশ্যক না তারা যেন টাকা না উঠায়।
নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এটি প্রাথমিকভাবে পরিচালনার দায়িত্ব নিলেও মূলত শেয়ার হোল্ডাররাই এটি পরবর্তীতে পরিচালনা করবেন। তবে ব্যাংক পরিচালনায় যেনো আবারো কোনো অসঙ্গতির সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পনা তৈরির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।