অনৈক্য রেখে সংবিধানে হাত না দিতে ৫৩ নাগরিকের বিবৃতি

২ সপ্তাহ আগে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মীমাংসা না করে তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংস্কারের দিকে না এগোতে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন দেশের ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান সংস্কারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে অগ্রসর হলে দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়তে পারে।


এই পরিস্থিতিতে, মতৈক্য না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।


গত ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির বিষয়গুলো (নোট অব ডিসেন্ট) সনদের খসড়া তফসিল থেকে বাদ দেয়া এবং গণভোটের সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। এমনকি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই সনদে সই করেনি।
 

শনিবার (১ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে ৫৩ জন নাগরিক বলেছেন, সংবিধান যে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এবং সম্মিলনের প্রতীক, এবং এর মর্যাদা অটুট রাখতে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
 

আরও পড়ুন: ঐকমত্য কমিশন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দিয়েছে, এটা প্রতারণা: ফখরুল


তারা মনে করেন, ঐকমত্য কমিশন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেয়ায় এই ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির মীমাংসা না করে সংবিধানে সংস্কার আনলে অনৈক্য দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর সংকট তৈরি হতে পারে।


বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকলে ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তির ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে, যার ফলে নির্ধারিত গণভোট বা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনও ব্যর্থ হতে পারে।


বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেছেন, অন্যান্য দেশে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একাধিক বছর ধরে আলাপ-আলোচনা চলতে দেখা যায়। সেই বিবেচনায় বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ঐকমত্য কমিশনের দেয়া ২৭০ দিনের (৯ মাস) সময়সীমা বাড়িয়ে দুই বছর বা যৌক্তিক সময় নির্ধারণের প্রস্তাব রেখেছেন তারা। তারা মনে করেন, নির্বাচনের পর সংসদ এবং সংসদের বাইরে এসব আপত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া জরুরি।


ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার আদেশের খসড়ায় ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাব পাসের কথা বললেও, বিকল্প সুপারিশে এই সময়ের মধ্যে সংসদ পাস না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
 

আরও পড়ুন: যেভাবে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে ঐকমত্য কমিশন


সুপারিশ হস্তান্তরের পরদিন ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন পর এই ৫৩ নাগরিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানালেন। তারা কমিশনকে কাজ চালিয়ে নেয়ার পাশাপাশি এতে নতুন করে লেখক, চিন্তক, অধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অংশীজনকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।


তাদের মতে, অরাজনৈতিক অংশের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিভেদ কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।


বিবৃতিদাতা ৫৩ জনের মধ্যে রয়েছেন: কবি কাজল শাহনেওয়াজ, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, অধ্যাপক আর রাজী (চবি), অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার (রাবি), অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মনসুর তমাল (জাবি), আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, সংগীতশিল্পী অমল আকাশ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরীসহ শিক্ষক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিল্পী, ও অধিকারকর্মীরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন