প্রবাসী ফুটবলারদের তিন দিনের ট্রায়াল শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু। ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ৪৯ জন প্রবাসীকে নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তরও দিলেন তিনি। যার সারকথা, অনূর্ধ্ব-১৭ দলে নেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি।
‘বাফুফে নেক্সট গ্লোবাল স্টার’-নামের তিন দিনের ট্রায়ালে বাফুফের কোচদের সামনে মেলে ধরেন নিজেদের স্কিল, গতি ও পারদর্শিতা। তাদের দলীয় ও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ধারণ করা ভিডিও বিশ্লেষণ করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানালেন টিটু। তবে এই ট্রায়াল থেকে আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ক্যাম্পে ডাকার মতো কয়েকজনকে পাওয়ার কথাও বললেন তিনি।
‘মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ এর ক্যাম্প শুরু করবো জুলাইতে। এখান থেকে কয়েকজনকে তো আমরা অবশ্যই দেখবো। তবে বিদেশি হাইপ আছে বলে দেশি মেধাবী কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, সেটা দেখতে হবে। সেই মানটা ওভাবে যাচাই করেই নেওয়া হবে। ভিডিওটা দেখে পর্যালোচনা করে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের জন্য সিদ্ধান্ত নিবো। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের খেলা আছে, কিন্তু এখানে ডাকার মতো ওরকম কাউকে ট্রায়ালে পাইনি।’
‘বীতশোক চাকমা এখানে কাল গোল করেছে। ওর স্টাইল, বল ধরা, দৌড়ানো, টেকনিক্যাল স্কিল খুবই সুন্দর। কিন্তু যখন আমরা ওদেরকে ক্যাম্পে ডাকব, তখন ওদের আসল ব্যাপারটা বেরিয়ে আসবে, ওই স্ট্যান্ডার্ডে ওরা কিভাবে বিহেভ করে, সেটা বেরিয়ে আসবে।’
আরও পড়ুন: সিটির বিপক্ষে জয় মাউন্ট এভারেস্টে ওঠার শামিল: ইনজাগি
এই তিন দিনে খেলোয়াড়দের কী কী মূল্যায়ন কোচেরা করেছেন, কী নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরলেন টিটু। দূরদূরান্ত থেকে জাতীয় স্টেডিয়ামে এসে, ভিন্ন কন্ডিশনে, বিশেষ করে গরমের মধ্যে প্রবাসীদের মেলে ধরার প্রচেষ্টা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন সাইফুল বারী টিটু।
‘আমরা তাদের যে দিকগুলো দেখেছি, টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল, ফিজিক্যাল এবং মেন্টাল অ্যাওয়ারনেস এবং এর মধ্যে একটা-দুটো পয়েন্ট বলবো, কনসেন্ট্রেশন উইথ পাওয়ার, যেমন একজন খেলোয়াড় ট্যাকল করার পর পড়ে গেল বা মিস পাস করলো, তারপর সে কী করবে, সেটাও আমাদের মূল্যায়নকারীরা দেখেছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের যে বিষয়টি, এখানে অনেকে ছিলো। যারা কেউ কখনও কারো সাথে খেলেনি, নিজেদের মধ্যে খেলার অভিজ্ঞতা হয়তো কয়েক জনের ছিলো, কিন্তু যেহেতু ১৪টি দেশ থেকে তারা এসেছেন, তাদের নিজেদের মধ্যে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না।’
‘গতকাল (৩০ জুন) দুইটা ম্যাচের আগে সাড়ে ১২টা থেকে ইনডিভিজ্যুয়াল সেশন ছিলো। ওই সময় এক একজনের সাথে আমরা কথা বলেছি, তাদের ফিডব্যাক নিয়েছি। তাদের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো, আমরা তাদের কী দিতে পেরেছি, কোন জায়গায় তাদের মনে হয়েছে আরেকটু ভালো করা যেত। তাদের জন্য প্রথম দিনটা ছিলো চ্যালেঞ্জিং। অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড থেকে এসেছিলো, ভ্রমণ ক্লান্তি ছিলো, ওই বিষয়টা সামলে ওরা খেলেছে, তবে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি ওদের প্রচেষ্টা দেখে।’
ট্রায়ালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে প্রবাসীরা নিজেদের ঠিকঠাক মেলে ধরতে পারে বলেও জানিয়েছেন টিটু। তবে তিন দিনের দেখায় এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চান না তিনি। এই প্রক্রিয়াকে তিনি বরং শুরু হিসেবে দেখতে চান।
আরও পড়ুন: রিয়ালের দুর্বলতা খুঁজে জয়ের কৌশল আঁটছে জুভেন্টাস
‘দ্বিতীয় দিন ছেলেরা আরও বেশি সাচ্ছ্বন্দ্য ছিল। সাত বনাম সাত ম্যাচ খেলিয়ে, কিছু পাসিং ড্রিল করে টেকিনিক্যাল স্কিল দেখিয়েছি, পরের দিন এটা আরেকটু বাড়িয়েছি। চূড়ান্ত দিনের খেলা ছিল আপনাদের জন্য। কেননা, আমাদের মতো আপনাদেরও তীব্র কৌতূহল ছিল ওরা কেমন করে। তবে সব মিলিয়ে আমরা বলব, আগে আমরা এমন কোনো আয়োজন করিনি, এই প্রথম করা হলো।’
‘হয়ত প্রশ্ন থাকতে পারে তো খেলোয়াড়ের সংখ্যা আরেকটু কমিয়ে এনে করা যেত কিনা, আরেকটা হচ্ছে যে প্রাথমিক পর্যায়ে ওদের মধ্যে কেমন মেধা থাকে, কারো গড়ন ভালো, কারো স্কিল ভালো, কৌশলগতভাবে কেউ ভালো-আমরা এগুলো দেখি। ট্রেনিং, ডিসিশন এগুলো কেমন করে, ওদের নিয়ে এখনই সিদ্ধান্তে আসার কোনো প্রয়োজন নেই।’
টিটু আরও বলেন, ‘কিছু খেলোয়াড়ের জন্য এটা দীর্ঘমেয়াদের প্রক্রিয়া, যাদের বয়স বেশি হয়ে গেছে, ওদের জন্য হয়তো সময় কম। আমরা যেটা করেছি, তিন দিনের ভিডিও রেকর্ডিং করেছি। প্রতিটি খেলোয়াড়কেও আলাদাভাবে ফোকাস করা হয়েছে। শেষ দিকে জুম করে ইনডিভিজ্যুয়াল খেলোয়াড় ধরে করা হয়েছে। আমাদের একটা অ্যাপস আছে, যেটা দিয়ে আমরা মূল্যায়ন করি, সেটা থেকেও একটা ধারণা পাবো। ওদেরকে আমরা মূলত বলেছি, আগামী এক থেকে দেড় বছর ওরা কী করবে, সেটাও আমাদের নিয়মিত জানাবে। তাতে একটা প্রক্রিয়া শুরু হলো।’
]]>