গাইবান্ধা শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে ঘাঘট নদী। এক সময় এ নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা এসে ভিড়ত শহরের পুরাতন বাজারের ঘাটে। কালের পরিক্রমায় এ নদী হারায় তার যৌবন। গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদীটি পরিণত হয় মরা খালে ও শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।
জেলা শহরে কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় নদীটি সংস্কার করে একটি দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ঘাঘট লেক রূপান্তর করার কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। লেকটি চালু হলে জনসাধারণের বিনোদনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য; এমন আশায় বুক বাঁধে পৌরবাসী।
প্রকল্পে ৩ কিলোমিটারের এ লেকের দুই পাড় দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত। লেক পারাপারের জন্য দুটি ব্রিজ। দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ। আকর্ষণীয় ৪টি ঘাট। লেকের দু-পাড়ের ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বৃক্ষ রোপণ ও আলোকসজ্জা করার কাজ শুরু হয়।
২০১৯ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় কথা থাকলেও দীর্ঘ ৬ বছরে থেমে থেমে লেক পারাপারের দুটি ব্রিজ, কিছু বসার বেঞ্চ, আংশিক ঘাট ও নদীর পাড় সংস্কার করে গত প্রায় ২ বছর থেকে বন্ধ লেকের কাজ। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে নির্মাণ করা লেকের পাড়, ফুটপাত ও বসার বেঞ্চসহ পূর্বের আংশিক কাজও। কচুরিপানা ও জঙ্গলে ভরে গেছে লেকটি। এতে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ও অর্থের ব্যবহার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
আরও পড়ুন: বাঁশ ও মাটি দিয়ে সেতু মেরামত, ঝুঁকিতে ২০ হাজার মানুষ
শহরের নতুন ব্রিজ মোড়ের বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, ‘সরকারি কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে লেকের নামে শুধু দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি যেসব কাজ করা হয়েছে তাও নষ্ট হচ্ছে। লেকের বরাদ্দের এতোগুলো টাকার কি হলো, তা নিয়ে আমরা হতাশ।’
শহরের ঘাঘট পাড়ের বাসিন্দা মোস্তাফিজ রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজের অর্ধেক না হতেই কি করে কাজ শেষ হয় আর কাজ শেষ না হলে এতদিনেও কেন শুরু হচ্ছে না, এ প্রশ্ন শহরের মানুষের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ময়লা-আর্বজনায় নদীটি আবারও ভড়ে গেছে। দুর্গন্ধে পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
গাইবান্ধা সদর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. বাবলু মিয়া জানান, ২০২৩ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ও অর্থ সংকটের পাশাপাশি দু-পাড়ের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জটিলতা হওয়ায় কাজটি থেমে আছে। লেকটি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এলজিইডির অর্থায়নে প্রথমে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হলেও পরে ব্যয় বাড়িয়ে ১৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় ঘাঘট লেক বাস্তবায়নের কাজ চলছিল। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুন মাস।