৩৪ বছর ধরে আদালতে ঘুরছেন মান্নান, জমির মামলার সুরাহা নেই!

২ সপ্তাহ আগে
ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আদালতগুলোতে তৈরি হয়েছে মামলাজট। মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় চরম ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা। মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব অনেকে। এ অবস্থায় দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির দাবি ভুক্তভোগীদের। তবে সরকারি আইনজীবীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আদালতে মামলা নিষ্পত্তির গতি বেড়েছে। জট কমাতে চলছে সম্মিলিত চেষ্টা।

জমি সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি চেয়ে বিচার পাওয়ার আশায় প্রায় ৩৪ বছর ধরে আদালতের বারান্দার ঘুরছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের মোক্ষপুর এলাকার আব্দুল মান্নান। দীর্ঘ সময় মামলা চালাতে গিয়ে এখন তিনি অনেকটাই নিঃস্ব। যুবক মান্নান এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ।


ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কথা হয় বিচারপ্রার্থী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে আমি একটি বাটোয়ারা মামলা করি। এরই মধ্যে মামলার তিনজন আইনজীবী মারা গেছেন। আমিও এখন মারা যাওয়ার পথে। অথচ এখনও মামলাটি নিষ্পত্তি হলো না। জমির ন্যায্য হিস্যাটা বুঝে পেলাম না। মামলার পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমি এখন নিঃস্ব-ক্লান্ত।’


ময়মনসিংহের আদালতে এমন মান্নানদের সংখ্যা হাজার হাজার। বিচার পেতে বছরের পর বছর ঘুরেও অনেকেই পাচ্ছেন না ন্যায়বিচার। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তথ্য বলছে, বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজের ২০টি আদালতে ঝুলে আছে প্রায় ৬৯ হাজার ৭২৮ টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা। এছাড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা আরও ২৮ হাজার ২৬টি।
একই চিত্র বিভাগের অন্য তিন জেলা জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনায়ও। জামালপুরে জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটের ২৭টি আদালতে মামলা আটকে আছে ২৫ হাজারের বেশি। শেরপুরের আদালতে দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তির ধীর গতিতে বাড়ছে মামলা জট। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিচারধীন মামলা ১৩ হাজার ৭৬৬ টি। নেত্রকোনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক সংকট না থাকলেও ৩১ হাজার ৬১৭ টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা জমে আছে আদালতে। আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে নাজেহাল বিচারপ্রার্থীরা।
 

ময়মনসিংহ জজ কোর্টের আইনজীবী এম এ হান্নান খান বলেন, ‘অনেক মিথ্যা মামলার কারণেও মামলার সংখ্যা বাড়ে। সেক্ষেত্রে থানাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মামলার প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করে যদি মামলাগুলো নেয়া যায় তাহলে মামলার সংখ্যা অনেকটাই কমে আসবে।’

আরও পড়ুন: ছিনতাইয়ের কবলে ব্যাংক কর্মকর্তা, ৯৯৯-এ ফোনে ৩ ছিনতাইকারী আটক

এ ব্যাপারে জামালপুর জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আনিসুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আদালতে মামলা নিষ্পত্তির গতি বেড়েছে।


ময়মনসিংহ জজ কোর্টের জিপি অ্যাডভোকেট মো. আজহারুল হক বলেন, ‘এখন প্রতি মাসেই অনেক চেয়ে অনেক বেশি মামলা নিষ্পতি হচ্ছে। কোনো মামলা আটকে রাখা হচ্ছে না। বিচারকরা দ্রুত সময়েই রায় দিয়ে দিচ্ছেন। আমরাও আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি। জট কমাতে চলছে সম্মিলিত চেষ্টা।’


আইনজীবীদের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আদালতে প্রতিদিন বিচার সংক্রান্ত কাজে আসেন ৫ হাজারের বেশি বিচারপ্রার্থী।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন