সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উত্থাপিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে এ তথ্য জানা যায়।
তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের শুল্ক-করহার পর্যায়ক্রমে হ্রাস করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৬৫টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করছি।
বর্তমানে বজায় থাকা ন্যূনতম ও ট্যারিফ মূল্য পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করার অংশ হিসেবে বিদ্যমান সকল ট্যারিফ মূল্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে ৮৪ টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার এবং ২৩টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি করে শুল্ক মূল্য যৌক্তিক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে ৩ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন।
এবার জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা। এটি দেশের ৫৪তম, অন্তবর্তীকালীন সরকার ও অর্থ উপদেষ্টার প্রথম বাজেট।। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬২%। এ ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়া হয়েছে।
বিগত বছরে প্রতিবার বাজেট দেয়া হতো জুনের প্রথম দিকে যেকোনো বৃহস্পতিবার। পবিত্র ঈদুল আজহা আগামী ৭ জুন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই এবার বাজেট উপস্থাপন করলেন অর্থ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ ৪০৫ কোটি
বাজেট–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায়। বরাবরের মতো এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
এবারের বাজেট উপস্থাপনে সংসদ না থাকায় কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে, আর সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো একদিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পরঅধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন রাষ্ট্রপতি, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
]]>