মানুষের হৃদয়ও এক ধরণের ভূমি। কোনো হৃদয় কোমল, কোনোটি কঠিন, কোনোটি মৃতপ্রায়। কিন্তু আল্লাহর কুদরতের বৃষ্টি সেই হৃদয়কেও জাগিয়ে তোলে যদি অন্তরে প্রবেশ করে ঈমানের পানি।
মৃত জমিনকে যেমন জীবিত করা হয়
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,
وَتَرَى الْأَرْضَ هَامِدَةً فَإِذَا أَنزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ আর তুমি ভূমিকে শুষ্ক অবস্থায় দেখো। অতঃপর আমি যখন তার ওপর পানি বর্ষণ করি, তা সজীব ও স্ফীত হয়ে ওঠে এবং উৎপন্ন করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ। (সুরা হজ:৫) এই আয়াতে আল্লাহ প্রকৃতির একটি দৃশ্যের মাধ্যমে ঈমান ও আত্মিক জাগরণের একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দিয়েছেন। ঠিক যেমন এক সময় শুকিয়ে যাওয়া জমিন জীবন্ত হয়ে ওঠে, তেমনি আত্মিকভাবে মৃত অন্তরও আল্লাহর বাণীতে জীবিত হয়ে ওঠে।
আত্মিক মৃত্যু ও বাস্তবতা
আল্লাহ বলেন,
أَوَمَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ যে ব্যক্তি মৃত ছিল, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং আমি তার জন্য এমন আলো দিয়েছি, যার দ্বারা সে মানুষের মাঝে চলে বেড়ায়। (সুরা আনআম:১২২) মুফাসিরগণ বলেন, এখানে মৃত মানে হচ্ছে অন্তরের ঈমানহীনতা, আর জীবিত করা মানে হচ্ছে হিদায়াতের আলো দ্বারা হৃদয়ের পুনর্জাগরণ।
বৃষ্টির মতো কুরআনও জীবন্ত করে তোলে
আল্লাহ বলেন,
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا... تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ، ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী অবতীর্ণ করেছেন, যাঁরা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের দেহ শিহরিত হয়, তারপর তাদের চামড়া ও হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কোমল হয়ে যায়। (সুরা জুমার: ২৩) এটি এক রকম আত্মিক বর্ষা। কুরআনের আয়াত শুনে যে অন্তর নরম হয়ে যায়, এর দ্বারা বোঝায় বৃষ্টিতে মৃত ভূমি জীবন্ত হওয়ার মতো অন্তরের জীবন্ত হয়ে যাওয়া।
আরও পড়ুন: হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়া কি কিয়ামতের আলামত!
রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হৃদয়ের জীবন্ততা
রাসূলুল্লাহ বলেন,
أَلَا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً... أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ জেনে রাখো! মানুষের দেহে একটি অঙ্গ আছে, তা যদি ভালো থাকে, পুরো শরীর ভালো থাকে, আর তা যদি নষ্ট হয়, পুরো শরীরও নষ্ট হয়। জেনে রাখো! সেটি হলো হৃদয়। (সহিহ বুখারি:৫২, সহিহ মুসলিম:১৫৯৯) যদি হৃদয় জীবন্ত না থাকে তাহলে সে মানুষ শুধু শারীরিকভাবে জীবিত, আত্মিকভাবে মৃত।
ঈমানের বৃষ্টি কীভাবে হৃদয়ে আসে?
১. তাওবা ও ইস্তিগফারে মাধ্যেমে পাপ থেকে ফিরে আসা। ২. কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর বাণী অন্তরে প্রবেশ করানো। ৩. আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার দ্বারা অন্তরে আল্লাহর স্মরণ সৃষ্টি করা। ৪. আল্লাহর প্রেম ও রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ অনুসরণে হৃদয় আলোকিত করা। ৫. নম্রতা ও কান্না চোখের অশ্রু হৃদয়কে নরম করে।
জীবন্ত হৃদয়ের আলামত কী?
১. কোরআন শুনলে হৃদয় কেঁপে ওঠে। ২. গুনাহ করলে অনুতাপ হয়। ৩. জিকির আজকার ও দুআ ভালো লাগে। ৪. অন্যায়ের বিরুদ্ধে রূহ জেগে ওঠে। ৫. নেক আমলের আগ্রহ জন্মায়।
যে হৃদয় গুনাহ, অবহেলা ও দুনিয়ার মোহে জমাট বেঁধে গেছে তাও জীবিত হতে পারে। প্রয়োজন শুধু ঈমানের বৃষ্টির যা আসে কুরআন, দুআ, আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা থেকে। বর্ষা যেমন মৃত জমিনে প্রাণ আনে, তেমনি এক ফোঁটা হিদায়াতের আলোও হৃদয়ের জমিনে এনে দিতে পারে নতুন জীবন, নতুন জাগরণ।