মাছ-পশু পাখির অন্যতম অভয়াশ্রম মৌলভীবাজারের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল। এখানে স্থায়ীভাবে গড়ে উঠা ছয়টি অভয়াশ্রমে স্থানীয় প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি করে হাওর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় আকর্ষণীয় পদ্ম শাপলাসহ অসংখ্য জলজ উদ্ভিদের প্রাণ প্রকৃতি রয়েছে এই বিলে। এছাড়া শীতের সকালে পরিযায়ী পাখি অন্যরকম মুগ্ধতা নিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
তবে পলি-বালিতে ভরাট হয়ে পড়া বিলটির মাছের ছয়টি স্থায়ী অভয়াশ্রম এখন অনেকটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বর্ষায় বিলের প্রাণ প্রকৃতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা থাকলেও শুধু পানি আর কচুরিপানার ছড়াছড়ি। হারিয়ে গেছে, মূল আকর্ষণ পদ্ম, শাপলা আর মাখনাসহ অনেক জীববৈচিত্র্য।
খাদ্য সংকটে মাছের উপস্থিতি কমেছে। বিল রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোন তত্ত্বাবধায়ক। স্থানীয়রা বলেন, পলি, বালি ও কচুরিপানায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে বিল। কমছে মাছও। পাশাপাশি ভরাট হয়ে যাওয়ায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে বাইক্কা বিল। আকর্ষণ কমছে পর্যটকদের।
বিল পাহারায় থাকা খাজুরি মিয়া বলেন, ‘এখন বিলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বন্ধ ঘোষণার পর পর্যটকও আসে না। প্রশাসনের নজরদারি নেই। বিল সংরক্ষণ ছাড়া উপায় নেই।’
আরও পড়ুন: দূরদর্শিতার অভাবে সংকুচিত হচ্ছে বিমান ও পর্যটন খাতের বাজেট!
সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বিল খননসহ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার দাবি জানায় সচেতন মহল ও মৎস্য বিভাগ। মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের বড়ো গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক রুম্মান আহমদ বলেন, বাইক্কা বিল হলো মাছের অভয়াশ্রম। অভয়াশ্রমের মাছ বংশবৃদ্ধি করে হাওড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিল ধ্বংস হলে হাওড় পাড়ের মৎস্যজীবীরা বিপদে পড়বে। তাই বিল খননসহ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা জরুরি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, মাছ-পাখি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অভয়াশ্রমটি সংস্কারের উদ্যোগ প্রয়োজন। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বিল খননসহ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হবে।
এদিকে বাইক্কা বিল খননসহ তার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় একটি প্রকল্প প্রস্তাব মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বাইক্কা বিল খনন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি প্রকল্প প্রস্তাব মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে বিল ফিরে পাবে তার পুরোনো রূপ।’
ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালে বিলুপ্ত প্রজাতি মাছের বংশ রক্ষার্থে হাইল হাওরের তিনটি বিলের সমন্বয়ে ১৭০ হেক্টর আয়তনের জলাভূমিকে একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।
]]>