যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের একটি বহুদলীয় গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আশার সঞ্চার হলেও, সেখানে ইসলামী উগ্রবাদীদের উত্থান হচ্ছে এবং বর্তমান সরকার প্রতিশোধ নিতে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে।
ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা সোমবার (২৫ নভেম্বর) জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সংসদ দ্য হাউস অফ কমন্স-এর একটি বহুদলীয় গ্রুপ বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে পাঠিয়েছেন, যেখানে তারা কয়েকটি “উদ্বেগজনক উপসংহার” টেনেছেন।
এই উপসংহারগুলোর অন্যতম হচ্ছে, ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদীরা লাভবান হচ্ছে।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশে ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের যেভাবে নিশানা করার হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, তা নিয়ে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি)ফর দ্য কমনওয়েলথ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
“এখানে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, উগ্র ইসলামপন্থীরা ক্রমশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং দৃশ্যমান হয়ে উঠছে,” এপিপিজি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এই সংসদীয় গ্রুপ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে দু’হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। সংসদ সদস্যরা আরও হুঁশিয়ারি দেন যে, বর্তমান সরকার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে “অস্ত্রে পরিণত করেছে।”
“অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতা সত্ত্বেও, শেখ হাসিনার পতন অনেকের জন্য আনন্দ এবং আশার বানী নিয়ে এসেছিল,” প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়।
“কিন্তু আমরা সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছি যা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আইনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সংস্কৃতির অবসান হওয়ার এবং মানবাধিকার আর আইনের শাসন সমুন্নত রাখার জুরুরি প্রয়োজন রয়েছে,” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
“এটা করতে ব্যর্থ হলে তা ডঃ মুহাম্মাদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ভাল হবে না।”
হত্যা মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
সংসদীয় গ্রুপ বলে, তারা তথ্য পেয়েছে যে প্রাক্তন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, প্রাক্তন বিচারক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে “এত সংখ্যায়” হত্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে যে “সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”
এপিপিজি’র চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য অ্যান্ড্রু রসিন্ডেল বলেন, এই প্রতিবেদন বাংলাদেশ এবং কমনওয়েলথ-এর সাথে সম্পৃক্ত সকল সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ইত্যাদির কাছে পাঠানো হবে।
পত্রিকাটি উল্লেখ করে যে, বাংলাদশে অস্থিতিশীলতার ঢেউ যুক্তরাজ্যে এসে পড়তে পারে, কারণ ইংল্যান্ড আর ওয়েলস-এ ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৬৪৪,৮৮১ বাংলদেশি-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আছেন, যা মোট জনসংখ্যার ১.১ শতাংশ।
শেখ হাসিনা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমারের মন্ত্রীসভায় ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের খালা হন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা-রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্দিকের নানা।