হজের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহভীরুতা

৩ সপ্তাহ আগে
হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত। দুনিয়ার কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ের একান্ত আকাঙ্ক্ষা, আমি একবার হলেও হজ করব, কাবার সামনে মাথা রাখব, আরাফার ময়দানে কান্না করব, মিনায় রাত কাটাব, কঙ্কর নিক্ষেপ করব, কোরবানি দিব, আর ফিরে এসে পরিপূর্ণ মুমিন হিসেবে জীবন কাটাব।

এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হজের সফর শেষ করে অনেকেই দেশে ফিরে আসেন এক নতুন পরিচয়ে “আলহাজ”। যদিও এটি  একটি আরবি শব্দ الحاجّ যার অর্থ হজ পালনকারী। 

 

কেউ কেউ এটি নামের আগে ব্যবহার করেন সম্মান ও স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে। তাতে দোষের কিছু নেই। তবে আজকাল একটি নতুন সামাজিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে  কেউ যদি  আলহাজ  শব্দটি ব্যবহার না করে, বা অন্য কেউ যদি হজ করে আসা ব্যক্তিকে আলহাজ না বলে ডাকেন, তাহলেই তিনি রাগান্বিত হন, অপমানিত বোধ করেন, কিংবা সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেন। এই প্রবণতা নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার আসলে হজ আমাদের কী শেখায়?

 

আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নিয়ে ইসলাম কী বলে

 

হজের শিক্ষা  বিনয় ও আত্মশুদ্ধি

 

হজের প্রতিটি কর্ম  ইহরাম পরা, কাবা তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সায়ি, আরাফায় কান্না, মিনায় রাত কাটানো সবই আমাদের শেখায় বিনয়, আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর নিকট নিঃশর্ত আত্মনিবেদন। আর এই শিক্ষা নিয়েই যখন কেউ ফিরে আসে, তখন তার আচরণ, ভাষা, চোখের পানি ও জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই বলে দেয় এই মানুষটি বদলে গেছে।

 

আসলে সত্যিকারের হজ কবুল হওয়ার বড় আলামত হলো অহংকার কমে যাওয়া, ক্ষমা করতে শেখা, গরিব অসহায়কে ভালোবাসা, আল্লাহর ভয় হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া। আলহাজ লেখা না থাকলেও যদি এই গুণাবলি থাকে, তবে সে-ই প্রকৃত সফলকাম।

 

ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি আলহাজ লেখা জরুরি নয়

 

হজ সম্পন্ন করা ব্যক্তি যদি নিজের নামের আগে আলহাজ যোগ করেন, তা হারাম নয়, কিন্তু এটি আবশ্যিকও নয়। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, এমনকি চার ইমামদের কেউও নামের আগে হাজি বা আলহাজ শব্দ ব্যবহার করতেন না, যদিও তারা হজ করেছেন বারবার। 

 

তবে আজকের সমাজে দেখা যাচ্ছে  কেউ যদি কাউকে আলহাজ না বলে, তখন তিনি বলেন, আমার সম্মান দেয় না। কেউ মনে করেন, আমার নামে আলহাজ না লিখলে আমার পরিচয়ই অসম্পূর্ণ। অনেকে হজকে সম্মানের চেয়ে উপাধিতে পরিণত করে ফেলেন। এসব আচরণ কেবল আত্মম্ভরিতার পরিচায়কই নয়, বরং হজের মৌলিক উদ্দেশ্যকেই হারিয়ে ফেলে।


রাগ আর অহংকার হজের পর অনুচিত প্রতিক্রিয়া

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 

যে ব্যক্তি হজ করল এবং অশ্লীলতা ও গোনাহ থেকে বিরত থাকল, সে এমনভাবে ফিরে আসে, যেন সে আজই মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে। (সহিহ বুখারি:১৫২১)


এ হাদিস স্পষ্ট করে দেয়  হজের পর একজন মুমিনের মন হবে কোমল, আত্মা হবে পরিশুদ্ধ, হৃদয় হবে বিনয়ী। কিন্তু “আলহাজ” না বলায় রাগ হওয়া, অপমান বোধ করা বা অন্যকে তুচ্ছ ভাবা  এগুলো হজের শিক্ষা নয়।

 

সমাজের জন্য প্রয়োজন একটি উদার মানসিকতা

 

আমাদের উচিত 


১. হজ করে এসে নম্রতা শেখা, ২. আল্লাহর নিকট কবুলের দুআ করা, ৩. নিজের পরিবর্তনকে মুখে নয়, কাজের মাধ্যমে দেখানো,
৪. অন্যকে আলহাজ না বলার কারণে অপমানিত না হওয়া। আর যারা হজ থেকে ফিরে এসেছেন, তাদের কাছে আমাদের মিনতি  আপনার পরিচয় আলহাজ নয়, আপনার পরিচয় হলো একজন আল্লাহভীরু, ত্যাগী, পরিশুদ্ধ মানুষ। এই পরিচয়ই চিরন্তন। আলহাজ শব্দটি লেখা না থাকলেও, হজ কবুল হোক এটাই হোক আমাদের আসল কামনা। নাম নয়, দুআর দরজায় আপনার পরিচয় থাকুক। আপনার চোখের কান্নায়, হাতের দু্‌আয়, চরিত্রের আলোয় মানুষ বুঝে নিক আপনি হজ করে এসেছেন। আমিন!

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন