হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট নিয়মে, নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে কিছু নির্ধারিত ইবাদত আদায় করা। এটি প্রতি বছর জিলহজ মাসে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত হয়।
হজের প্রথম দিন ৮ জিলহজ
পূর্ব থেকেই ইহরাম অবস্থায় না থাকলে হজের ইহরাম বাঁধা (ফরজ)। এইদিন সূর্যোদয়ের পর মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানা হওয়া (সুন্নাত)। সূর্যোদয়ের আগে রওয়ানা হওয়া সুন্নাতের খেলাফ। মিনায় জোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজর মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা (সুন্নাত)। মিনায় রাত্রি যাপন করা (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা)।
হজের দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজ (ইয়াওমুল আরাফা)
ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানে রওয়ানা হওয়া। আরাফাতে অবস্থান করা হজের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। সুতরাং ৯ই জিলহজ দ্বিপ্রহরের পর থেকে পরের দিন সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে এক মুহূর্তও যদি আরাফাতে অবস্থান করা না হয়, তাহলে হজ হবে না। তাই দ্বিপ্রহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান ওয়াজিব। তাই এই সময় দোয়া, দরুদ ও ইস্তেগফারে মশগুল থাকা।
আরও পড়ুন: হাজিদের বরণে প্রস্তুত মিনা
সুতরাং এক মুহূর্ত যেন অযথা নষ্ট না হয়। হানাফি মাজহাব অনুসারে কেবল মসজিদে নামিরার জামাতে শরিক হতে পারলেই জোহরের সময় আছরের নামাজ একসাথে মিলিয়ে পড়বে। নিজ তাঁবুতে পড়লে জোহর জোহরের সময় আর আছর আছরের সময় পড়তে হবে।
সূর্যোস্তের পর মাগরিব না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজান ও দুই একামতে এশার ওয়াক্তে আদায় করা (ওয়াজিব)। অতঃপর মুজদালিফায় রাত যাপন করা (সুন্নাত)। মুজদালিফায় সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে আকাশ খুব ফর্সা হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করা (ওয়াজিব)। আজ ফজরের নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আছরের নামায পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাযের পর তাকবিরে তাশরিক ১বার পড়া (ওয়াজিব)।
হজের ৩য় দিন ১০ জিলহজ (হাজিদের জন্য ব্যস্ততম দিন)
মুজদালিফায় অবস্থান শেষে আকাশ খুব ফর্সা হয়ে যাওয়ার পর সূর্যোদযের আগে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া। মিনায় পৌঁছে প্রথমে একমাত্র বড় শয়তানকে ৭টি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার সময় ১০ জিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১১ জিলহজ সুবহে সাদেক পর্যন্ত। তবে সুন্নাত সময় হলো সূর্যোদয়ের পর থেকে নিয়ে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত। দ্বিপ্রহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জায়েজ সময় এবং রাতে পাথর নিক্ষেপ মাকরূহ তবে দুর্বল ও মহিলাদের জন্য মাকরূহ নয়। তারপর কোরবানি করা।
তামাতু ও কিরান হজ কারিদের জন্য ওয়াজিব, এবং ইফরাদ হজ কারীদের জন্য মুস্তাহাব। তারপর মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাঁটা (ওয়াজিব)। পাথর মারা, কোরবানি করা ও মাথা মুন্ডানো এ কাজ গুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব। তারপর মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত করা (ফরজ)। পূর্বে হজের সাঈ না করে থাকলে সাঈ করা (ওয়াজিব)। অতঃপর তাওয়াফ, সাঈ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করা (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা)।
হজের ৪র্থ দিন ১১ জিলহজ
তাওয়াফে জিয়ারত, কোরবানি ও চুল মুন্ডানো বা ছাঁটাই করে না থাকলে এই দিনে করে নিবে। দ্বিপ্রহর থেকে পরবর্তী সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়ে মিনায় শয়তানদের স্তম্ভে ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। সুতরাং দ্বিপ্রহরের পূর্বে পাথর মারলে তা আদায় হবে না।
তাই পাথর নিক্ষেপ করার সুন্নত সময় হলো দ্বিপ্রহর পর থেকে সূর্যোস্ত পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর মাকরূহ সময়। তবে দুর্বল ও মহিলাদের জন্য মাকরূহ নয়।প্রথমে ছোট শয়তানকে ৭টি, তারপর মেঝো শয়তানকে ৭টি তারপর বড় শয়তানকে ৭টি মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করা (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা)।
হজপর ৫ম দিন ১২ জিলহজ
তাওয়াফে জিয়ারত, কোরবানি না করে থাকলে আজ সূর্যোস্তের পূর্বে করে নেওয়া আবশ্যক।দ্বিপ্রহর থেকে পরবর্তী সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময়ে মিনায় শয়তানদের স্তম্ভে ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। দ্বিপ্রহরের পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করলে তা আদায় হবে না।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নিয়ে ইসলাম কী বলে
সুতরাং সুন্নাত সময় হলো দ্বিপ্রহর পর থেকে সূর্যোস্ত পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ করা। সূর্যাস্তের পর মাকরূহ সময়। তবে দুর্বল ও মহিলাদের জন্য মাকরূহ নয়।প্রথমে ছোট শয়তানকে ৭টি, তারপর মেঝো শয়তানকে ৭টি তারপর বড় শয়তানকে ৭টি মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। এই দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে মক্কায় চলে আসা জায়েজ।
হজের ৬ষ্ঠ দিন ১৩ জিলহজ
যদি ১২ তারিখে সূর্যাস্তের পর কেউ মিনায় অবস্থান করে তাহলে তার জন্য ১৩ তারিখে পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। পাথর নিক্ষেপ করবে দ্বিপ্রহরের পর। মিকাতের বাহির থেকে আগমনকারী হাজিগণ মক্কা শরিফ ত্যাগ করার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করা (ওয়াজিব)।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ, ঢাকা
]]>