স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধির দোয়া

২ সপ্তাহ আগে
একটি হৃদয়ছোঁয়া দোয়া, যে দোয়া দাম্পত্য জীবনে শান্তি আনবে, ভালোবাসার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। আর এ ভালোবাসা হয় আল্লাহর জন্যই। তাই এ ভালোবাসার মূল্য অনেক বেশি।

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। তবে বাস্তব জীবনে প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কেই আসে উত্থান-পতন, ভুল-বোঝাবুঝি কিংবা দূরত্বের মুহূর্ত। এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা ও সম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকলে এটাতে এত সমস্যা কেনো আসে?

 

উত্তরটাও খুব সহজ, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব মহান আল্লাহর কাছে অতি জঘন্য আর শয়তানের অতি পছন্দের বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব শয়তানের অতি পছন্দের। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে তার আনন্দের সীমা থাকে না। 

 

আরও পড়ুন: ইসলামি ১২ মাসের তাৎপর্য ও ফজিলত

 

 

হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইবলিস শয়তান সমুদ্রের পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে পাঠায়। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ফিতনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিতনা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলিস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করোনি।

 

তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দিইনি, এমনকি দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। তিনি (সা.) বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে কাছে বসায় আর বলে- তুমিই উত্তম কাজ করেছ। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় জাবির (রা.) এটাও বলেছেন যে অতঃপর ইবলিস তার সঙ্গে আলিঙ্গন করে। (মুসলিম, হাদিস: ৭২৮৪)


এমন সময় আল্লাহর দরবারে খোলা মনে দোয়া করলে সেই ভালোবাসা ও শান্তি ফিরে আসতে পারে, সম্পর্কের গভীরে আবার জেগে উঠতে পারে প্রশান্তি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।


এই দোয়াটি আল-কুরআনের সুরা আল-ফুরকান (২৫:৭৪) থেকে নেয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত সুন্দর ও অর্থবহ। এ দোয়া স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি করে। মহব্বত ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।

 

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا উচ্চারণ: রব্বানা হাব লানা মিন্‌ আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ'ইউনিন্‌ ওয়াজআ’লনা লিল্‌মুত্তাক্বীনা ইমামা।

 

অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের চোখের শীতলতা দান করো, এবং আমাদেরকে পরহেজগারদের জন্য এক আদর্শ (নেতা) বানাও। (সুরা আল-ফুরকান: ৭৪)

 

এই দোয়াটিতে আমরা শুধু ভালোবাসা নয়, বরং শান্তি, মমতা, পথনির্দেশনা এবং নেকসন্তান চেয়েছি। ‘কুররাতা আঈউন’ অর্থাৎ ‘চোখের শীতলতা’ এমন এক আরবী অভিব্যক্তি, যা গভীর প্রশান্তি ও তৃপ্তিকে বোঝায়।


দোয়ার দ্বিতীয় অংশে রয়েছে একটি মহৎ আকাঙ্ক্ষা, পরহেজগারদের মধ্যে নেতা বা আদর্শ হওয়ার দোয়া। অর্থাৎ আমরা শুধু নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক নয়, বরং একটি নেক পরিবার গড়ে তোলার দোয়াও করছি। এমন একটি পরিবার, যারা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে।


এই দোয়া স্বামী-স্ত্রী উভয়েই পড়তে পারেন। হোক আপনি নতুন বিবাহিত কিংবা বহু বছরের দাম্পত্য জীবন পার করেছেন, এই দোয়ার গভীর অর্থ এবং শক্তি দু’জনের মাঝে মমতা, ক্ষমাশীলতা ও ভালোবাসার বাতি আবার জ্বালাতে পারে।


প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর, বিশেষ করে ফজর ও এশার নামাজের পরে পড়লে খুব উপকার পাওয়া যায়। চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে বা শান্ত মুহূর্তে একসাথে বসে এই দোয়াটি পড়তে পারেন।

 

নিয়মিত পড়লে ধীরে ধীরে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়, সম্পর্কের মাঝে ফিরে আসে বোঝাপড়া ও মানসিক প্রশান্তি। আপনার ভালোবাসার গল্পের অংশ হোক এই দোয়া। এই দোয়াটি শুধু মুখের কথা নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে এক হৃদয়বদ্ধ সম্পর্ক।


চুপিচুপি নিজের মনে বলুন, ছোট একটি চিরকুটে লিখে সঙ্গীর হাতে দিন, কিংবা কঠিন সময়েও হৃদয়ে লালন করুন এই দোয়া—কারণ একমাত্র আল্লাহই মানুষের হৃদয়কে এক করতে পারেন।

 

আরও পড়ুন: কোরআনে বর্ণিত যে ১০ শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ অপছন্দ করেন


একটি শক্তিশালী ও মজবুত সংসারের ভিত্তি গড়ে ওঠে একান্তভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে। তাই দয়া করে এমন সময়ের অপেক্ষা করবেন না যখন সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মুখে, বরং এখনই আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে বলুন,

 

হে আল্লাহ, আমাদের ভালোবাসা বাড়িয়ে দাও, আমাদের মাঝে শান্তি কায়েম করো, আমাদের পরিবারকে করো রহমতের ছায়া। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ভালোবাসায় পূর্ণ একটি জীবন ও দাম্পত্য শান্তি দান করেন, আমিন।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন