শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে লোহাগড়া উপজেলার ঘাঘা গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয় প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেজবাহ মৃধা। সে পাচুড়িয়া কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষার্থী এবং মালয়েশিয়া প্রবাসী মৃধা সালাউদ্দিন লিটু ও ময়না বেগমের একমাত্র সন্তান।
নিখোঁজের পরদিন রবিবার (৩১ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লোহাগড়া থানা পুলিশের অভিযানে উপজেলার নিরিবিলি পিকনিক স্পটের একটি আবাসিক হোটেল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় মূল অভিযুক্ত রোজিনাকেও আটক করা হয়।
শিশুটির মা ময়না বেগম শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপরই লোহাগড়া থানার একাধিক টিম মাঠে নামে। সময় সংবাদের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার রাতে ঘাঘা গ্রামের একটি দোকানের সামনে শিশু মেজবাহ ও তার চাচাতো ভাই সাঈদ খেলছিল। পরে এক নারী (রোজিনা) ও উজ্জ্বল শেখের গতিবিধি ফুটেজে ধরা পড়ে।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর রোজিনার ছেলে সাকিবের সঙ্গে বেলুন হাতে শিশুটিকে সড়কে হাঁটতে দেখা যায়। এরপর থেকেই মেজবাহ নিখোঁজ ছিল।
পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে একটি অপহরণ চক্রের ভয়াবহ পরিকল্পনা। গ্রেফতাররা হলেন- উপজেলার ঘাঘা উত্তরপাড়া গ্রামের শহিদ শেখের ছেলে উজ্জ্বল শেখ (৩৬), বাবুল লস্করের স্ত্রী রোজিনা (৪০) ও তার ছেলে সাকিব লস্কর (১৭) এবং একই উপজেলার যোগিয়া গ্রামের হানিফ শেখের ছেলে জান্নাতুল শেখ (২০)।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে ৬ পর্যটককে অপহরণের চেষ্টা, বিএনপির ৪ নেতাকর্মী আটক
পুলিশ জানায়, মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন শিশুটির বাবার আপন চাচাতো ভাই উজ্জ্বল শেখ। মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে শিশু অপহরণের পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনায় যুক্ত যুক্ত করেন রোজিনা এবং তার ছেলে সাকিব ও সহযোগী ভ্যানচালক জান্নাতুলকে।
নিরিবিলি পিকনিক স্পটের কেয়ারটেকার আবুল কালাম জানান, রোজিনা ১ হাজার ৫০০ টাকায় একটি রুম ভাড়া নেন এবং দাবি করেন, সাথে থাকা শিশুরা তার নাতি। তিনি জানান, রোজিনা সকালে ঢাকায় যাবেন বলে জানিয়েছিলেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও স্থানীয় তদন্তে উজ্জ্বলের সম্পৃক্ততা পেয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার ও রোজিনাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাকি অভিযুক্তদেরও নাম প্রকাশ পায়।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত অভিযান চালিয়ে শিশু মেজবাহকে উদ্ধার করা হয়। আটক চারজনের বিরুদ্ধে শিশু অপহরণ ও মানবপাচার আইনে মামলা হয়েছে এবং তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।”
৮ ঘণ্টার ভয়াবহ অনিশ্চয়তার পর একমাত্র সন্তানকে ফিরে পেয়ে বাকরুদ্ধ মা ময়না বেগম। সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "বাবা আমার বাবা, ও বাবা!" – যেন সন্তান ফিরে পাওয়াই তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।