স্ত্রী-সন্তানসহ আ.লীগ নেতা বেন্টুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী ও ছেলের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২৯ জুন) সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।

দুদকের ভাষ্য, বেন্টুর পরিবারের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয় আওয়ামী সরকারের আমলেই। আজিজুল আলম বেন্টু, তার স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে ৩৬টি দলিল মূলে ৯ দশমিক ৪০ একর জমি রয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের মোট ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, সম্পদ বিবরণীতে বেন্টু দুদককে সাত কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৫ টাকার সম্পদের বিবরণ দিয়েছিল। তবে দুদকের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, বেন্টুর আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।

অনুসন্ধানকালে দুদক দেখেছে, বেন্টুর স্ত্রী নাসিমা আলম একজন গৃহিণী হলেও তার নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে। নাসিমা আলমের ২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিল করা আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৭ টাকা। অনুসন্ধানকালে নাসিমা আলমের আয়ের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামী বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার নিজের আয়কর ফাইলে দেখিয়ে আয়কর নথি খোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সাবেক হুইপ স্বপন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছেলে রুহিত আমিনের পেশা ছাত্র হলেও তার নামেও আয়কর নথি খোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ করবর্ষে দাখিল করা আয়কর নথি অনুযায়ী, তার নামে মোট সম্পদ ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ টাকার। অনুসন্ধানকালে তারও আয়ের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। বাবা বেন্টুর অর্জিত সম্পদ তার আয়কর ফাইলে দেখিয়ে নিজ নামে আয়কর নথি খোলা হয়েছে।

আয়কর নথিতে দেখা যায়, বেন্টু তার স্ত্রী এবং ছেলেকে গাড়ি কেনার জন্য ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকাও দিয়েছেন।

দুদক বলছে, নাসিমা আলম তার স্বামী আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। একইভাবে ছেলে রুহিত আমিনও তার বাবা আজিজুল আলম বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদ বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে আয়কর নথি খুলে সম্পদ অর্জন দেখিয়েছেন। এসব অবৈধ সম্পদ নিজেদের নামে রেখে ও ভোগদখল করে তারাও অপরাধ করেছেন। তাই মামলায় আজিজুল আলম বেন্টু ছাড়াও স্ত্রী ও ছেলেকে আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিসিবির সাবেক পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী নগরীর একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আজিজুল আলম বেন্টু ‘বালু বেন্টু’ নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে একচেটিয়া বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই আজিজুল আলম বেন্টু আত্মগোপনে রয়েছেন।

মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, মামলাটি দায়েরের পর রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

]]>