স্কুলের মাঠে মাসব্যাপী মেলা ও লটারি, বারান্দায় হচ্ছে অ্যাসেম্বলি

৪ সপ্তাহ আগে
গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকায় বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পণ্যের মেলার নামে চলছে লটারি বাণিজ্য। সরকারি লোগোযুক্ত পুলিশের ব্যানার ব্যবহার করে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে আয়োজকদের বিরুদ্ধে।

বিদ্যালয়ের সীমানা দেয়াল ভেঙে বসানো হয়েছে টিকিট বিক্রির কাউন্টার। মেলার কারণে তিনটি বিদ্যালয়ের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা বা অ্যাসেম্বলি করতে পারছে না। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অনেকে মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, দুলনায় চড়ছে।

 

এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠের পাশেই রয়েছে গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গাছা আইউব আলী বিদ্যাপীঠ। গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাঠ না থাকায় এখানেই প্রতিদিন অ্যাসেম্বলি হতো। মাঠে তিন বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী খেলাধুলা করত।

 

কিন্তু গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ বেনারশি মসলিন অ্যান্ড জামদানি সোসাইটির সভাপতি এম এ মাঈন খান ওরফে বাবুল নামে এক ব্যবসায়ী প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে এক মাসব্যাপী ‘গ্রামীণ ও কুটির শিল্প পণ্য মেলা’র আয়োজন করেন। বাস্তবে সেই মেলার আড়ালে চলছে ২০ টাকার লটারির টিকিট বিক্রি। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাছনারা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে কোনো জায়গা নেই, তাই এই মাঠেই আমরা অ্যাসেম্বলি করি। কিন্তু মেলার কারণে সামনে টিনের বেড়া দিয়েছে। মেলাটি গত মাসের ৮ তারিখে শুরু হলেও প্রস্তুতি শুরু হয় আরও আগে। এখন কষ্ট করে বিদ্যালয়ের বারান্দায় অ্যাসেম্বলি করতে হচ্ছে।’

 

আরও পড়ুন: গাজীপুরে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

 

গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন যদি অনুমোদন দেয় মেলা করার, তবে আমাদের কিছুই করার নেই।’

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, লটারির টিকিট বিক্রি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন প্রতারণা চললেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের নীরবতা এবং আয়োজকদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে।

 

জানা গেছে, গাজীপুর জেলা প্রশাসক মেলা বন্ধে নোটিশ দিলেও পুলিশ এখনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দ্বন্দ্বের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানান, আয়োজক কমিটি প্রথমে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করলে তা অনুমোদন দেয়া হয়নি। কিন্তু পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ মেলার অনুমোদন দেয় এবং উদ্বোধনও করে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদ হোসেন ভূঞা জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে আইনের ধারা উল্লেখ করেন যে, মহানগর এলাকায় জনসাধারণের বিনোদন ও মেলা আয়োজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পুলিশ কমিশনারের।

 

গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, ‘মেলার জন্য আমাদের কাছে আবেদন করা হলে আমরা অনুমোদন দেইনি। পরে পুলিশ নিজেই অনুমোদন দিয়েছে। বিষয়টি গতকাল (রোববার) কোর কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন