মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিশাল মাঠ জুড়ে চারু-কারু শিল্পীদের হাতে তৈরি নানা পণ্যের প্রদর্শনীর স্টল। তাদের ৩২ টি স্টলসহ মোট ১০০টি স্টল নিয়ে এবারও আয়োজন করা হয়েছে এই লোকজ মেলা। বাঁশ, বেত, কাঠ, শোলা, মাটি, তামা, কাঁসা ও পিতলের তৈরি পণ্যসহ পাটজাত দ্রব্য, নকশি কাঁথা, জামদানি কাপড়, শীতলপাটি ও শতরঞ্জির পসরা সাজিয়ে বসেছেন চারু-কারু শিল্পীরা। শিশু কিশোরদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বায়োস্কোপ, নাগরদোলা ও চরকিসহ নানা আয়োজন।
আয়োজকরা জানান, মেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে জারি, সারি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালন ও হাছন রাজার গানসহ পুঁথি পাঠের আসর। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক বড় সর্দার বাড়ি দেশি বিদেশি পর্যটক ও দর্শণার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। তাদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, আনসার বাহিনী, স্কাউট দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা নিয়োজিত থাকবে। মেলায় কারু শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি কর্মীরা।
আরও পড়ুন: বিশৃঙ্খলার কারণে পণ্ড মেহেরপুর সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মিলনমেলা
কবি ও লেখক শাহেদ কায়েস বলেন, ‘কারু শিল্পীদের প্রমোট করা, তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করা এবং তরুণ প্রজন্মকে এই শিল্পের প্রতি উৎসাহিত ও ধাবিত করা সহ যে উদ্দেশ্য নিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এই ফাউন্ডেশনটি গড়ে তুলছিলেন সেটা কিচতু এখানে হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা মনে করি চারু কারু শিল্পীদের প্রমোট করতে সরকারের আরও উদ্যোগী হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশে বিদেশে চারু কারু শিল্পীদের পরিচিতি আরও বাড়াতে ভবিষ্যতে তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যুক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এর মাধ্যমে চারু কারু শিল্পীদের পরিচিতি, প্রচার প্রসার এবং তাদের পণ্য বিক্রয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে।’
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে মাসব্যাপী এ লোকজ মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এই লোকজ মেলার প্রচার প্রসার ও পরিচিতি দেশব্যাপী আরও বাড়াতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হবে। পাশাপাশি পর্যটকদের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বস্তিদায়ক করতে মেলায় প্রবেশের সড়কটির সংস্কার করা জরুরি বলে আমি মনে করি।’
আরও পড়ুন: ছুটির দিন জমজমাট বাণিজ্য মেলা, বেচাকেনায় খুশি ব্যবসায়ীরা
এছাড়া সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরের পুরনো ঝরাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কারের ব্যাপারেও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এসব স্থাপনা সংরক্ষণের পর হ্যারিটেজ মিউজিয়াম ও দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ লোকজ মেলা।