খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে নদ-নদী ও সাগরে ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময়। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ সাগর হতে নদীতে আসে। মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার নিরাপদ সুযোগ করে দিতে সরকার প্রতিবছরই এই সময়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে থাকে। এ সময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিপণন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার একমাত্র উপকূলীয় এ উপজেলায় নিবন্ধিত দুই হাজারের অধিক জেলে রয়েছে। তাদের মধ্যে উপকূলীয় জেলের সংখ্যা এক হাজার। কার্ডধারী ইলিশ ধরে এমন জেলে রয়েছেন ২৭৫ জন। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা সকল জেলের জন্য প্রযোজ্য, তবে এই সময়ে শুধু নিবন্ধিত ইলিশ জেলেদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৬ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র যেসব জেলে ইলিশ জাল ব্যবহার করেন তারা ছাড়া অন্যরা সরকারি সহায়তা পাবেন না।
আরও পড়ুন: মা ইলিশ রক্ষা অভিযান: ভোলায় ২৬টি বরফকল সিলগালা
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সোনাগাজী সদর ও চরচান্দিয়া ইউনিয়নের জলদাসপাড়ার জেলে পল্লীতে নৌকা ও মাছ ধরার সরঞ্জাম ইতোমধ্যেই উপকূলে ফেলে রেখেছেন জেলেরা। নৌকাগুলো নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে বেঁধে রাখা রয়েছে।
একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরে তিনবার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময় বিকল্প কাজ খুঁজতে হয়। একদিকে নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধিতে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। সংসারের ব্যয় চালাতে মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ ও এনজিওর কিস্তির টাকা শোধ করাও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় জেলে হরি লাল জলদাস বলেন, নদী ও সাগরের মোহনা থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেই সংসার চলে। কিন্তু এখন ২২ দিন পুরোপুরি আয়ের পথ বন্ধ। নিবন্ধিত জেলে হয়েও আমি কোনো সহায়তা পাই না, কারণ শুধু ইলিশ জেলের তালিকাভুক্তদের জন্যই প্রণোদনা বরাদ্দ থাকে।
ভোলা নাথ নামে আরেক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন নদীতে নামতে পারছি না। এই নিষেধাজ্ঞার পর শীত মৌসুম চলে আসবে। শীতে আমরা আর মাছ পাবো না। এরপর থেকে নদী ও সাগরের মোহনায় গেলেও ইলিশ রেণু এবং জাটকাই বেশি পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার আগে চাঁদপুরে চড়া দামে বিক্রি ইলিশ
সাধন দাস নামে এক জেলে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই এ বছরের ইলিশ মৌসুম শেষ হয়ে গেল। এখন সরকারের কাছ থেকে যে চাল পাবো তা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পরে যখন মাছের আকাল দেখা দেবে, তখন আমাদের নিত্য ঋণ করেই সংসার চালাতে হবে। জেলে পেশার পাশাপাশি এই জেলে পাড়ায় ভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করলে আমাদের বড় একটি জনগোষ্ঠী স্বস্তি পেতো।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আকতার বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার আগে সচেতনতা তৈরির জন্য আমরা লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা করেছি। এ সময়ে নিয়মিত টহল জোরদার থাকবে। সরকার শুধু নিবন্ধিত ইলিশ জেলেদের জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। তবে নিষেধাজ্ঞা সবার জন্য। সকলে আইন মেনে চলতে হবে।
]]>