সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ কমেছে ৪০ শতাংশ, নেপথ্যে কী?

৪ সপ্তাহ আগে
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর মধু আহরণের পরিমাণ অনেক কমে এসেছে।

বন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সুন্দরবন থেকে মোট ৩৪৫ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের এপ্রিল ও মে মাসে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০৭.৫ মেট্রিক টনে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম। এ পরিমাণ মধুর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩৩ লাখ টাকা।

 

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের প্রধান কেন্দ্র হলো পশ্চিম ও পূর্ব বন বিভাগ। পশ্চিম বন বিভাগ থেকে এ বছর সংগৃহীত মধু ১৪২.৮ মেট্রিক টন, যেখানে পূর্ব বন বিভাগ থেকে সংগ্রহ হয়েছে ৬৪.৭ মেট্রিক টন। পশ্চিম বন বিভাগে খুলনা রেঞ্জ থেকে ৫৭.৪ মেট্রিক টন এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ৮৫.৪ মেট্রিক টন মধু পাওয়া গেছে।

 

জানা যায়, এই মধু আহরণের হ্রাসের পেছনে মৌয়ালদের সংখ্যা কমে যাওয়া অন্যতম প্রধান কারণ। গত বছর যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার মৌয়াল মধু আহরণে নিয়োজিত ছিলেন, এবার তাদের সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় তিন হাজারে।

 

আরও পড়ুন: জিআই স্বীকৃতিতে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে সুন্দরবনের মধুর চাহিদা

 

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মৌয়াল মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘গত বছর আমি সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে গিয়েছিলাম। এবার যাইনি। এখন বনের ভেতরে জলদস্যু বেড়ে গেছে। একবার তাদের হাতে ধরা পড়লে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। কোনো চালানও দেয় না তারা। জীবন নিয়ে খেলতে পারি না, তাই এই বছর বাদ দিয়েছি।’

 

এ বছর মধু সংগ্রহে যাওয়া খুলনার দাকোপ উপজেলার চন্দনপাইকের এক মৌয়াল নুর ইসলাম বলেন, ‘আমি এবার মধু তুলতে গিয়েছিলাম। আগের বছরগুলোতে বনের ভেতরে অনেক মৌয়াল দেখা যেত, কিন্তু এবার তুলনায় অনেক কম লোককে পেয়েছি। সবাই ভয় পায়, বিশেষ করে নতুন যারা, তারা যাচ্ছে না।’

 

মধু উৎপাদনের এই ধস এমন এক সময় দেখা দিলো, যখন বাংলাদেশের মধু আন্তর্জাতিকভাবে নতুন একটি পরিচিতি অর্জন করেছে। কিছুদিন আগেই সুন্দরবনের মধু ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই)’ বা ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি পেয়েছে, যা একটি দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলের পণ্যের মান, বৈশিষ্ট্য ও সুনামকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই স্বীকৃতির ফলে সুন্দরবনের মধু আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।

 

আরও পড়ুন: সুন্দরবনের মধু ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

 

কিন্তু সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়নের আগেই মধু আহরণে এ ধস উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন কমে যাওয়ায় শুধু দেশীয় বাজারই নয়, ভবিষ্যতের রফতানি বাজারও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

 

বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ বলেন, ‘মধু আহরণের পরিমাণ এ বছর কম হলেও আমরা মৌয়ালদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বনাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি মৌয়ালদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আশা করছি, আগামী বছর পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন