সুদের ভয়াবহতায় কেউই লাভবান হয় না

৪ ঘন্টা আগে
সুদ এমন একটি ব্যাধি, যা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও ধ্বংস ডেকে আনে। ইসলাম যে কারণে সুদকে নিষিদ্ধ করেছে, তা আজকের আধুনিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও স্পষ্ট। সুদ সমাজে বৈষম্য, লোভ এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করে, যা একটি জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি বিনষ্ট করে।

সুদের বিকল্প হিসেবে দান ও হালাল ব্যবসা প্রবর্তনের মাধ্যমে সমাজে ভারসাম্য ও ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ অনুযায়ী, একটি সুদমুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করতে পারি।

 

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সুদ থেকে বিরত থাকতে হবে আর দান, সাদাকাহ ও হালাল উপার্জনে নিজেদের জীবন পরিচালিত করতে হবে।

 

আরও দেখুন: মুয়াজ মাহমুদ যেভাবে বিশ্বজয় করেছিলেন

 

১. সুদ কি হারাম?

 

ইসলামে সুদ (রিবা) হারাম হিসেবে ঘোষিত। কুরআন ও হাদিসে সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।(সুরা বাকারা ২৭৫)

 

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন কর্জ থেকে কোন ফায়দা নিলে, সেই ফায়দাটাই একধরনের রিবা। (বায়হাকি) সুতরাং সুদ যে ইসলামিক শরীয়তে স্পষ্টভাবে হারাম, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর কারণ সুদ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক দিক থেকে মানবজীবনের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।

 

২. সুদ হারাম কেন?

 

সুদকে হারাম করার পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ ক. সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি সুদ একটি শ্রেণিকে সম্পদশালী এবং অপর শ্রেণিকে দরিদ্র করে তোলে। এটি অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ত্বরান্বিত করে। খ. মানবতাবিরোধী চরিত্র সুদ সম্পদশালী শ্রেণিকে অন্যায়ভাবে গরিবের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার সুযোগ দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করেন। (সুরা বাকারা ২৭৬)

 

গ. নৈতিক অবক্ষয়। সুদ সমাজে লোভ, হিংসা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে, যা শান্তি বিনষ্ট করে। ঘ. আধ্যাত্মিক ক্ষতি রসুল (সা.) সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদ লেখক এবং সাক্ষীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম ৪১৭৭)

 

৩. সুদের ভয়াবহ পরিণতি সুদের কারণে ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। ক. আধ্যাত্মিক পরিণতি রসুলুল্লাহ (সা.) মেরাজের রাতে সুদখোরদের সম্পর্কে বলেছেন, তাদের পেট ছিল মটকার মতো বড়, যার ভেতরে অনেক সাপ ছিল যা বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। (ইবনে মাজাহ ২২৭৩)

 

খ. অর্থনৈতিক। ধ্বংস সুদের মাধ্যমে যে অর্থ আয় করা হয়, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে বরকতমুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন মানুষের সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে যা বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না। (সুরা রুম ৩৯)


গ. সামাজিক পতন। সুদ সমাজে অবিশ্বাস এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করে, যা একটি জাতির উন্নয়ন ব্যাহত করে। ৪. সুদে কারা লাভবান আর কারা ক্ষতিগ্রস্ত? সুদে সরাসরি লাভবান হয় সম্পদশালী মহল, যারা ঋণ প্রদান করে। তারা পরিশ্রম ছাড়াই অর্থ উপার্জন করে।

 

১. গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা ঋণগ্রহণ করতে বাধ্য হয়। ২. ঋণের চক্রে আটকে থাকা মানুষদের পরিবার এবং ভবিষ্যৎ। ৩. সামগ্রিকভাবে সমাজ এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতি। আল্লাহ তাআলা সুদকে হারাম করে ব্যবসাকে হালাল করেছেন, কারণ ব্যবসায় ন্যায়পরায়ণতা এবং পরিশ্রমের মূল্যায়ন হয়।


হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। (সুরা বাকারা ২৭৮) আসুন, আমরা সকলেই সুদের ভয়াবহতা থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলি এবং একটি সুদমুক্ত সমাজ গড়ে তুলি।

 

আরও পড়ুন: ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায়: ধর্ম উপদেষ্টা

 

সুদ মানবতার জন্য এক অভিশাপ। এটি ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। ইসলামে সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর বিকল্প হিসেবে দানের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুদমুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা নৈতিক ও সামাজিক উন্নতি অর্জন করতে পারি।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন