২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ইকোপার্কটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যেমন পাহাড়ি টিলা, ঘন জঙ্গল আর আঁকাবাঁকা পথ, পর্যটকদের আকর্ষণ করত। ২০১৮ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র চালু করার পর গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা হয়েছিল ১১ প্রজাতির ৮৮টি প্রাণী। কিন্তু অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও চিকিৎসার অভাবে প্রাণীগুলো ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকে।
ইকোপার্ক ঘুরতে আসা শারমিন বলেন, ‘এই পার্কটি সিলেট বিভাগের মধ্যে একটি, আগে বেশ জমজমাট থাকলেও এখন আর সেই আগের পরিবেশ নেই, নেই তেমন বন্যপ্রাণীও। বেশিরভাগ প্রাণীই মারা গিয়েছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই। তাই এখন এই পার্কে আসলেই কষ্ট লাগে।’
আরও পড়ুন: দক্ষিণ সুরমার চাঁদনীঘাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
পার্কে থাকা খাঁচাগুলো এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত। চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোর জন্য কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র বা চিকিৎসক নিয়োগ না থাকায় অসুস্থ প্রাণীদের নিয়ে যেতে হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগে।
শুরুতে পার্কে ছিল হরিণ, জেব্রা, ময়ূর, আফ্রিকান প্যারট, লাভবার্ডসহ দেশি-বিদেশি প্রাণী। কিন্তু বর্তমানে এই চিড়িয়াখানায় বেঁচে আছে মাত্র কয়েকটি হরিণ, গ্রে প্যারট, ময়ূর ও অজগর সাপ। শৈত্যপ্রবাহের সময় একদিনেই মারা যায় ৩০টি লাভবার্ড।
ইজারাদার মেসার্স অমি এন্টারপ্রাইজ পার্কের দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়। বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়া এবং অব্যবস্থাপনার কারণে তারা ৫ আগস্টের পর পার্কটি ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে বনবিভাগের চারজন কর্মচারী এই বিশাল এলাকা দেখাশোনা করছেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘পার্কের ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তা ঘুরিয়ে আনা হলে এবং প্রাণীদের খাঁচাগুলো উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তরিত করলে প্রজনন বাড়বে। এছাড়া চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে প্রাণীগুলোর সঠিক যত্ন নিতে হবে।’
সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বিদেশি প্রাণীগুলো স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি। আমরা প্রাণীগুলোকে সাফারি পার্কে স্থানান্তরের আবেদন করেছি। এছাড়া বিনোদন, পর্যটন এবং গবেষণা সুবিধার জন্য ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে।’
আরও পড়ুন: এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় সিলেট বিভাগে ৩৭৫ প্রাণহানি
সিলেট ইকোপার্কের বর্তমান অবস্থার উন্নতির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি পড়েছে। নতুন ইজারাদার নিয়োগের মাধ্যমে পার্কের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা এবং প্রাণীদের সঠিক তত্ত্বাবধানের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই পার্ক আবারও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠতে পারে বলে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
]]>